সংলাপ চলাকালে সংঘাত চায় না বম পার্টি

পর্যটন নিয়ে আপত্তি

| বৃহস্পতিবার , ২০ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল আর্মিকেএনএফ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের জেরে সৃষ্ট সহিংসতা ও বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সংলাপ শুরু করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। শহরের একটি রিসোর্টে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী এই সংলাপে উদ্যোক্তা সংগঠন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে পাহাড়ে স্থিতিশীলতা ফেরাতে কেএনএফের কাছে শান্তির প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

অপরদিকে কেএনএফের পক্ষ থেকে এই সংলাপ চলাকালে কোনো ধরনের সংঘাতঅপহরণের ঘটনা যাতে না ঘটে তার নিশ্চয়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানান শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র ও বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা। সংলাপ শেষে তিনি বলেন, আমরা শান্তির প্রস্তাব দিয়েছি। তারাও শান্তি চায় বলে জানিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে কতকগুলো দাবি এসেছে। আমরা বলেছি, সেগুলো সরকারের কাছে পৌঁছে দেব। কেএনএফ সদস্যরা বলেছেন, সংলাপ চলাকালীন কেউ যাতে সংঘাত ও অপহরণের মতো ঘটনা না ঘটায়। তারা পর্যটনসহ বেশ কিছু বিষয়েও আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের আপত্তির বিষয়গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। আলোচনা শুরু হয়েছে মাত্র। এই শান্তির সংলাপ চলমান থাকবে। খবর বিডিনিউজের।

আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিকতার সঙ্গে সুন্দরভাবে হয়েছে উল্লেখ করে মুখপাত্র জানান, কেএনএফের সাধারণ সম্পাদক মুনয়ার এতে নেতৃত্বে দিয়েছেন। সঙ্গে আরও তিনচারজন ছিলেন। অপরদিকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির ১২ জন সদস্য ছিলেন।

২০২২ সালের শুরুর দিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কেএনএফ নামে একটি সশস্ত্র সংগঠনের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানা যায়। পরে অক্টোবরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, কেএনএফ বা ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত এই সশস্ত্র সংগঠন অর্থের বিনিময়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

এরপর জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভিযান চালায় র‌্যাব ও সেনা সদস্যের যৌথ বাহিনী। পরবর্তীতে এ অভিযান চালানো হয় থানচি উপজেলাতেও। অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হয়েছে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু সদস্যও। সংঘাতে প্রাণ হারায় বম পার্টির সদস্যরাও। এর জেরে আতঙ্কে ভারতের মিজোরামে পালিয়ে যায় বম জনগোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক নারীপুরুষ। বন্ধ হয়ে যায় বান্দরবানের পর্যটকদের ভ্রমণও। জুম চাষের ক্ষতির পাশাপাশি সংঘাতপূর্ণ এলাকায় জনজীবন অস্থির ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়ের ১১টি নৃগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ ও অন্য পেশাজীবীরা জনজীবন স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে কেএনএফের সঙ্গে সংলাপের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করেন। মে মাসে মতবিনিময় করার পর জুনের শেষ সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিটি গঠন ও এর উদ্দেশ্যের কথা জানানো হয়।

১৮ সদস্যের এই কমিটির আহ্বায়ক বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা এবং সদস্যসচিব বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লালজারলম বম। এছাড়া কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন বম সোশ্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা রেভারেন্ট পাকসিমবয়ত্‌লুং বম, জেলা পরিষদের সদস্য ও ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিলের উপদেষ্টা সিংইয়ং ম্রো, বাংলাদেশ খুমী কল্যাণ অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা লেলুং খুমী, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু ও সাংবাদিক বুদ্ধজ্যোতি চাকমা।

কমিটিতে সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা প্রশাসনের কেউ নেই। তবে এ ধরনের সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা এই ধরনের সংলাপকে সাধুবাদ জানাই। কেউ পাহাড়ে সংঘাত চায় না। পাহাড়ে সবাই শান্তি চায়। যে ঘটনাগুলো ঘটেছে দ্রুত তার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

জেলা পরিষদ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়ে বম সোশ্যাল কাউন্সিল ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনদের নিয়ে শান্তির উদ্যোগ নিয়েছে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

কেএনএফের ফেইসবুক পেইজে তারা জানিয়েছেন, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাইছড়ি, বিলাইছড়ি ও বান্দরবান জেলার রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদমসহ ছয়টি উপজেলা নিয়ে ‘কুকি চিন রাজ্য’ হিসেবে গঠন করা হবে।

এরপর গত বছর অক্টোবর মাস থেকে জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলার অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব ও সেনা সদস্যের যৌথ বাহিনী। অভিযানের কারণে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশিবিদেশি পর্যটক ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে গত ১৪ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রোয়াংছড়ি ছাড়া সব উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে প্রশাসন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাল্টাপাল্টি হামলা, ভাঙচুর
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে সাপের কামড়ে শিশুর মৃত্যু