সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলন ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথম কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে রাজধানী ঢাকার উত্তরা আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেছে বিএনপি।
আগের দিন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় এই পদযাত্রায় ‘ক্ষমতাসীনদের হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে’ বলে হুঁশিয়ার করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
আজ বুধবার(১৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় পদযাত্রা শুরুর আগে আবদুল্লাহপুরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
গতকাল মঙ্গলবারের পদযাত্রায় মিরপুরের বাঙলা কলেজে থেকে ছাত্রলীগের ঢিল ছোড়ার ঘটনা তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, “আমার গণতান্ত্রিক অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমরা মিছিল-মিটিং করব আর আপনারা বাঙলা কলেজ থেকে ইট মারবেন, পাথর মারবেন আর আমরা ছেড়ে দেব… এটা তো হবে না। ছেড়ে দেওয়ার দিন শেষ, এখন খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। আমাদের অধিকারকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। গতকাল সারা দেশে আপনারা (ক্ষমতাসীনরা) যে অত্যাচার করেছেন আমাদের ওপরে, সেই অত্যাচারের সমুচিত জবাব আমরা দেব ইনশাল্লাহ।”
বাংলাদেশের জনগণ ভোটের অধিকার ‘আদায় করে নেবে’ মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “১৫ বছর আপনাদের অত্যাচার আমরা সয়েছি, এই অত্যাচার আর আমরা সইব না। আমরা, দেশের জনগণ, বিএনপির নেতা-কর্মীরা জেল খাটতে শিখেছে, মৃত্যুবরণ করতে শিখেছে, মিছিল করতে শিখেছে… আপনাদের অত্যাচার আর সহ্য করতে পারব না। আমরা অত্যাচারের জবাব দেব।”
আবদুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটের সামনে শুরু হওয়া এ পদযাত্রা বিমানবন্দর, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুন বাজার, বাড্ডা, রামপুরা ব্রিজ, আবুল হোটেল, খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদাপাড়া, সায়েদাবাদ হয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হবে বিকাল ৪টায়।
মহানগর উত্তর বিএনপির নেতৃত্বে এ পদযাত্রা উত্তরা থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত যাবে। এরপর মহানগর দক্ষিণের নেতৃত্বে সেখান থেকে পদযাত্রা যাবে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত।
পদযাত্রায় যোগ দিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা সকাল ১০টা থেকেই আবদুল্লাহপুরে জড়ো হতে থাকেন। সেখানে দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।
মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবেদনী ফারুক, গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন বক্তব্য দেন।
গত ১২ জুলাই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে সরকার হটানোর ‘এক দফা’ আন্দোলনের যে ঘোষণা দেন তার প্রথম কর্মসূচি হিসেবে মঙ্গলবার সারাদেশে মহানগর ও জেলায় এই পদযাত্রা কর্মসূচি হয়। রাজধানীতে প্রথমদিন গাবতলী থেকে পুরনো ঢাকার রায়সাহেব বাজার পর্যন্ত পদযাত্রা হয়।
বিএনপি’র এই পদযাত্রার দুই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ‘শান্তি সমাবেশ ও উন্নয়ন শোভযাত্রা’ নিয়ে মাঠে রয়েছে। বড় দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে মঙ্গলবার দিনের দ্বিতীয় ভাগে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানীর রাজপথ।
ঢাকার মিরপুর ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় এ দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা হয়। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে এক যুবদল নেতা নিহত হন।
সেই প্রসঙ্গ ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, “গতকাল লক্ষ্মীপুরে আমাদের লোক মেরেছেন, আপনারা শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি তৈরি করছেন। আমাদের মিটিংয়ে আমাদের মিছিলে কোনো রকম গোলোযোগ হয় না। আপনারা গোলযোগ তৈরি করতে চান। কেন? আমরা যেদিন মিছিল-মিটিং করি, আপনারা সেদিন দিয়েন না। আপনারা যেদিন করবেন, আমরা দেব না। আর তা না করে গোলযোগ করাবেন… এটা আর সহ্য করা হবে না।”
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, “বিশাল রাস্তা, উপরে রোদ, নিচে উত্তপ্ত রাজপথ আর আওয়ামী লীগের অত্যাচার– এই তিনটা বাধা অতিক্রম করে আমাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, এই তিনটি বাধা অতিক্রম করে আমাদেরকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, এই তিনটা বাধা অতিক্রম করে আমাদের তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের কথা বলার অধিকার আদায় করতে হবে, আমাদের ভোটের অধিকার আদায় করতে হবে। এই বাংলাদেশ কারো করদ রাজ্য নয়, এই বাংলাদেশ এদেশের মানুষ বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন করেছে।”
মির্জা আব্বাস বলেন, “আমি দেখলাম, কাদের সাহেব (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের) বলেছেন, সংবিধানের বাইরে আপনারা একচুল সরবেন না। খুব ভালো কথা কাদের সাহেব। আপনার কথায় আপনি স্থির থাকেন। আমরাও বলি, সংবিধানের বাইরে আমরাও এক পা যাব না। সবার লক্ষ্য সংবিধান। খায়রুল হকের (এবিএম খায়রুল হক) সংবিধান না, বাংলাদেশের সংবিধান। আমরা চাই অখণ্ড সংবিধান। যে সংবিধানে কাটাছেঁড়া করা হয় নাই। যে সংবিধান থেকে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে ওই সংবিধান আমরাও চাই না।”
ঢাকা ছাড়াও বুধবার দিনাজপুরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খুলনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং চট্টগ্রাম মহানগরে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী পদযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।
বিএনপি’র পাশপাশি সমমনা জোটগুলোর মধ্যে বেলা ১১টায় গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এবং ১২ দলীয় জোট কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা শুরু করেছে।
বিকাল ৩টায় জাতীয়তাবাদী সমমনা দল কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এবং লেবার পার্টি পুরানা পল্টন থেকে মানিকনগর পর্যন্ত, এলডিপি এফডিসির কাছে থেকে, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আরামবাগের কাছ থেকে পদযাত্রা করবে।
বিএনপি’র এই পথযাত্রাকে ঘিরে ২০ কিলোমিটার সড়কপথের বিভিন্ন অংশে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।