পদযাত্রায় বিএনপি, ফখরুল বললেন জয়যাত্রা

| বুধবার , ১৯ জুলাই, ২০২৩ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রথম কর্মসূচিতে গাবতলী থেকে থেকে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এটা শুধু পদযাত্রা নয়, এটা জয়যাত্রা। মানুষের অধিকার আদায়ের পথে বিজয়ের জয়যাত্রা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে গাবতলীতে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তার এ মন্তব্য আসে। নেতাকর্মীরা এ সময় উচ্চস্বরে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। খবর বিডিনিউজের।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আজকে সারা বাংলাদেশের শুধু পদযাত্রা নয়, এর আগে সভা হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিআমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে পদত্যাগ করবেন। এক দফা এক দাবি, দাবিটা কী?

এরপর বিএনপি মহাসচিব নিজেই উত্তর দেন, পদত্যাগ করো, ওই পার্লামেন্ট যেটা বানাইছো সেটা বিলুপ্ত করো এবং একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও।

তিনি বলেন, আমরা ১২ তারিখে নয়া পল্টন থেকে যে দাবি দিয়েছি, সারা দেশের মানুষের কাছে শুধু আমরা বিএনপি নই, ৩৬টি রাজনৈতিক দল একযোগে ঘোষণা দিয়েছে যে, এই সরকারকে এখনই পদত্যাগ করতে হবে। এদেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

ফখরুল বলেন, আসুন এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে আমরা নতুন যাত্রা শুরু করি। এটা হচ্ছে বিজয়ের যাত্রা। এই যাত্রার মধ্য দিয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায় করব। এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের পার্লামেন্ট গঠন করব।

এই রৌদ্র, বৃষ্টি, ঝড় সব কিছুকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয়ী হতে হবে আমাদেরকে। আমি সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবীসহ সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি এই দেশকে রক্ষা করতে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, দেশের স্বাধীনতাসার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে আমাদের আজকে একজোট হতে হবে।

এই পদযাত্রা ঘিরে মহানগরীরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা সমবেত হন বিভিন্ন স্পটে। ফলে অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদযাত্রার বহর দীর্ঘ হতে থাকে। দলীয় ও জাতীয় পতাকা এবং সরকার পদত্যাগের দাবি সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে, লালসবুজহলুদ রঙের ক্যাপ মাথায় দিয়ে কর্মীরা পদযাত্রায় অংশ নেন। স্লোগানে স্লোগানে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানাতে থাকেন তারা। এই পথযাত্রাকে ঘিরে ১৪ কিলোমিটার পথের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।

ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য দেন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকার এই মার্চের মধ্য দিয়ে জনগণ এই বার্তা দিচ্ছে যে, সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।

গত ১২ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করে বিএনপি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। একই দিনে সমমনা দল ও জোটগুলো আলাদা সমাবেশ থেকে যুগপৎ একই কর্মসূচি ঘোষণা করে। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে গাবতলী থেকে বিএনপির পদযাত্রা শুরু হয়। আজ বুধবারও একই কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির। বিএনপির পাশপাশি সমমনা জোট গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরামপিপলস পার্টি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ, সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ যুগপৎভাবে একই কর্মসূচি পালন করছে।

ঢাকা১৭ উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ ধরে পদযাত্রার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ঢাকায় নির্বাচন কমিশন একটা উপনির্বাচনের তামাশা করেছে। সেই উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল অত্যন্ত হেভিওয়েট প্রার্থী। সে আবার আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাঙ্কের প্রধানদেশের সব মানুষ তাকে চেনে, প্রফেসর ড. আরাফাত। প্রতিদ্বন্দ্বী কে? হিরো আলম। ওই নির্বাচনেও ভোটাদেরকে নিতেই পারে নাই। ভোটকেন্দ্র শূন্য, ভোটকেন্দ্র খালি। ইলেকশন কমিশন যেটা একেবারে পঙ্গু, অর্থব, বংশবদ, দাসানুদাস, তাদের অধীনে মাত্র ১১% ভোট পড়েছে।

ফখরুল বলেন, আমরা তো দেখলাম কোথাও ভোটার নাই। পাঁচ ঘণ্টা পর একটা ভোটার আসছে, ওকে নিয়ে লাফালাফি কাড়াকাড়ি। ভোটের রেজাল্টের পর আরাফাত সাহেব আবার আঙ্গুল দেখায়ভিক্টরি। লজ্জা লজ্জা শেইম, শেইম। হিরো আলম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নয়, তাকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে পিটিয়ে পিটিয়ে সাপ যেভাবে মারে সেভাবে মারা হয়েছে।

সম্প্রতি এক সম্মেলনে বর্তমান সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের অকুণ্ঠ সমর্থনের প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, অসৎ ব্যবসায়ীদের সরকার একটা। জনগণের টাকা লুট করে নিচ্ছে, যারা এলএনজির দাম বাড়ায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ায়, লুটপাট করে টাকা বিদেশে নিয়ে যায়, সিঙ্গাপুর, কানাড়ায় বাড়ি বানায়তাদের জন্য এই সরকার। শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা আলাপ করে। লজ্জা হয়, দুঃখ হয়, ঘৃণা জানাই, ঘৃণা জানাই এই সরকারকে। ঘৃণা জানাই এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী, যে আপনি আজকে গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগ্রেপ্তার ৭, দুজনের রিমান্ড
পরবর্তী নিবন্ধইইউ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ঘোড়ার ডিম পেয়েছে বিএনপি : কাদের