তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর বিএনপি অনেক উদ্বেলিত হয়েছিল। এখন দেখি বিএনপি ভালো হয়ে গেছে, তাদের মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তারা পুলিশের ওপর আগের মতো হামলা পরিচালনা করার সাহস পাচ্ছে না। বিএনপির আশা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কিছু বলবে। কিন্তু এ নিয়ে তারা টুঁ শব্দটি করে নাই। এজন্য তারা প্রচণ্ড হতাশ হয়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা–পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উন্নয়ন শোভাযাত্রায় নগরীর ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে যোগ দেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব গত সোমবার চট্টগ্রামে শ্রমিক সমাবেশ করেছেন। তিনি সেখানে কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলেছেন আমরা বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভর করি না। অথচ বিএনপি দিনের বেলায় তারুণ্যের সমাবেশ, হাঁটা কর্মসূচি, বসা কর্মসূচি, মাঝেমধ্যে দৌড় কর্মসূচি দেয়। আবার রাতবিরাতে রুমিন ফারহানা, শামা ওবায়েদ, নিপুণ রায়সহ তাদের মহিলা নেত্রীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন অ্যাম্বেসিতে ধর্না দেন, উনাদের পায়ে ধরেন। এখন তারা বুঝতে পেরেছেন ধর্না দিয়ে কোনো লাভ হয় নাই। মার্কিন প্রতিনিধিদল এসেও তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কিছু বলে নাই। তারা বুঝতে পেরেছে তাদের এই তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি বিদেশিরাও প্রত্যাখ্যান করেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার উদ্দেশ্যে সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মানসে সারা দেশে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে। ক’দিন আগে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। পরশুদিন খুলনা শহরেও তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। আমি দেখলাম সেখানে সব ষাটোর্ধ মানুষ, সবাই ৫০ ও ৬০ বছর বয়সের তরুণ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যদি তারুণ্যের ডেফিনেশনটা কি একটু বলতেন, তাহলে ভালো হতো।
তিনি বলেন, বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। আজকেও তারা বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। আওয়ামী লীগ গণমানুষ থেকে গড়ে ওঠা রাজপথের দল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে উজান ঠেলে এগিয়ে যাওয়ার দল। আমরা রাজপথে আছি, নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকব। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টানা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়ে তারপর আমরা ঘরে ফিরে যাব।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সাথে আমাদের দলের বৈঠক হয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবেও বৈঠক হয়েছে। তারা স্পষ্টত বলেছে যে, আমরা বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন কানুন মেনেই এখানে যাতে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হয় সেটিই আমরা চাই। তারা তত্ত্বাবধায়ক কিংবা নির্বাচনকালীন সরকার এসব কোনো কিছুর কথা বলে নাই। আমাদের দেশ চলবে আমাদের সংবিধান ও আমাদের আইন অনুযায়ী। কারো প্রেসক্রিপশনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ চলবে না। এটা বঙ্গবন্ধুর কন্যা, যার ধমনিতে, শিরায় বঙ্গবন্ধুর রক্তস্রোত প্রবাহমান।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন শুরু হয় তখন পৃথিবীর অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে দিয়ে, এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়েও ফোন করিয়েছিল এই বিচার বন্ধ করার জন্য। বিচার বন্ধ হয় নাই। ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। শেখ হাসিনা সেগুলোর তোয়াক্কা করে নাই। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং রায় কার্যকর হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি চেষ্টা করবে গণ্ডগোল লাগানোর জন্য। সেই সুযোগ আমরা তাদেরকে দেব না। তবে কেউ রক্তচক্ষু দেখালে আওয়ামী লীগ জানে কী করতে হবে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী সংগঠন। বিএনপির মির্জা ফখরুল সাহেব কয়দিন পরপর চট্টগ্রামে আসছেন। এখানে এসে লাভ নাই। যদি বাড়াবাড়ি করেন আপনাদের আন্দোলন বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা–১৭ আসনের উপনির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর কালিমা লেপনের উদ্দেশ্যে একজন প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা করা হয়েছে। তাদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেটি নিয়েও অনেকের কত মাতামাতি। যারা করেছে তারা দুষ্কৃতকারী। তারা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এটি করেছে। আমরা এটির নিন্দা জানাই। তবে অনেকে ঘুরে ঘুরে নির্বাচন করেন নির্বাচিত হবার জন্য নয়, নির্বাচন করে প্রচার পাওয়া এবং ঘটনাকে প্রমোট করার জন্য। যাতে আরো বেশি প্রচার পাওয়া যায়। সেটিও মাথায় রাখতে হবে।
নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কি পদত্যাগ করেন–এমন প্রশ্ন রেখে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং কন্টিনেন্টাল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, সেটিই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করে। আমাদের দেশেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার আগামী নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা এই সরকারের আমলে যে সকল উন্নয়ন হয়েছে সে বার্তাগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে এবং বিএনপি–জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি ও শোভাযাত্রা শুরু করেছি। এই শুরু কখনো শেষ হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তি–সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত না হয়। কারণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। আওয়ামী লীগ কখনো পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি এবং আসবেও না। আমাদের আস্থা ও ভরসা জনগণ। আওয়ামী লীগ ধারাবাহিক ক্ষমতায় থাকায় শেখ হাসিনা যে অভূতপূর্ব উন্নয়নগুলো করেছেন তার দ্বিতীয় কোনো নজির সারা বিশ্বে নেই। এই বাস্তবতার আলোকে এদেশের জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার আছে। এই অধিকারকে বারবার সামরিক স্বৈরাচার ছিনিয়ে নিয়েছিল। এই শুরুটা হয়েছিল স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের দ্বারা। বিএনপি নামক এই দলটি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চায়। দলটি যদি স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করে তাহলে যে সমস্ত দেশ আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল তাদেরকে মুরুব্বি ভাবছে কিভাবে এবং কেন? এই প্রশ্নের একমাত্র জবাব হচ্ছে, বিএনপি একাত্তরের পরাজিত শক্তির ওপর নির্ভর করে এদেশকে আবার পাকিস্তান বানাতে চায়। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রমাণ করবে এদেশে আগামীতে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো অপশক্তির অস্তিত্ব থাকবে না।
মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, নোমান আল মাহমুদ এমপি ও চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু।
উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এড. সুনীল কুমার সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপদেষ্টা সফর আলী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাছনী, হাছান মাহমুদ শমসের, এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মসিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন, হাজী জহুর আহমদ, ইঞ্জিনিয়ার মানস রক্ষিত, জোবাইরা নার্গিস খান, দিদারুল আলম চৌধুরী, শহীদুল আলম, নির্বাহী সদস্য আবুল মনছুর, কামরুল হাসান বুলু, নুরুল আবছার মিয়া, জাফর আলম চৌধুরী, সৈয়দ আমিনুল হক, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, বখতেয়ার উদ্দীন খান, মহব্বত আলী খান, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, ড. নিছার উদ্দীন আহমেদ মঞ্জু, পেয়ার মোহাম্মদ, হাজী বেলাল আহমদ, মোর্শেদ আক্তার চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশের পর ড. হাছান মাহমুদ, মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা বের হয়। স্টেশন রোড, কোতোয়ালী, লালদীঘি, সিনেমা প্যালেস হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শোভাযাত্রা শেষ হয়।