ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সময় সাশ্রয় রেলযাত্রীদের জন্য বড় সুসংবাদ

| মঙ্গলবার , ১৮ জুলাই, ২০২৩ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ঢাকাচট্টগ্রাম রেল পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সময় সাশ্রয় হবে বলে জানা গেছে। সংবাদটি রেলযাত্রীদের জন্য আনন্দের। গত ১৬ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ঢাকাচট্টগ্রাম রেলপথের লাকসামআখাউড়া ৭২ কিলোমিটার ডাবল রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ২০ জুলাই ডাবল লাইনের উদ্বোধন করা হবে। এই খবর ঢাকাচট্টগ্রাম রুটের ট্রেন যাত্রীদের জন্য আনন্দের এবং অনেক বড় প্রাপ্তিও বটে। স্বাধীনতার ৫২ বছরে এসে প্রথমবারের মতো ঢাকাচট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথ ‘ডাবল লাইনে’ উন্নীত হলো। এরমধ্যে দিয়ে ঢাকাচট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামঢাকা রুটের প্রতিটি আন্তঃনগর এবং মেইল এক্সপ্রেসের যাত্রার সময় ঘণ্টা বাঁচবে। প্রতিটি ট্রেন নির্দিষ্ট গতিসীমায় (দ্রুতগতিতে) ছুটতে পারবে। এখন তূর্ণা নিশীথা, সুবর্ণ এক্সপ্রেসে সাড়ে ৫ ঘণ্টা থেকে পৌনে ৬ ঘণ্টা সময় ব্যয় হয় ঢাকাচট্টগ্রাম রুটে। সোনার বাংলায় সময় লাগে সাড়ে ৫ ঘণ্টা। রেলওয়ে পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, এখন প্রতিটি আন্তঃনগর ট্রেনের দেড় ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে। সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাচট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামঢাকা পৌঁছতে পারবে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ঢাকাচট্টগ্রাম রেলপথের ১১৮ কিলোমিটার আগে থেকেই ডাবল লাইন ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ১৩১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজ লাইনে উন্নীত করার জন্য লাকসামআখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্প নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। যা গত ৮ বছর ধরে চলেছে।

এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। কেবল সড়কের উপর নির্ভর করে একটি দেশের পরিপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব নয়। এরই অংশ হিসেবে রেলওয়ের উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে রেলের উন্নয়ন হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকবল সংকট থাকার পরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০ নভেম্বর বলেছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ দ্রুত হয়েছে। ঢাকা থেকে আরও অল্প সময়ের মধ্যে যাতে রেলে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যায়, তার জন্য নতুন একটা রেল লাইনের চিন্তা করছি। এটা আমরা কবর। করোনা এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক চাপটা আমাদের ওপরে আছে, এটা কমে গেলে এ কাজগুলো করতে পারব। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাক। কর্ণফুলী ড্রাইডক স্পেশাল ইকোনমিক জোনসহ ৫০টি শিল্প এবং অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে আমরা আন্তর্জাতিক মানের এয়ারপোর্ট করে দিচ্ছি। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল করে দিচ্ছি। এপারের মানুষ ওপারে যেতে আর অসুবিধা হবে না। তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা সহজে বুঝতে পারি যে তাঁর সরকার রেলের উন্নয়নে কতটা আন্তরিক। বাংলাদেশ রেলওয়েকে সম্পূর্ণ আধুনিক করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। আসলে সার্বিক অগ্রগতির লক্ষ্যে রেল ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। রেলকে একটি নিয়মতান্ত্রিক অবস্থায় আনতে এবং যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে রেলের নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে। যা দেশবাসীকে খুবই আশান্বিত করেছে, এ কথা বলতেই হয়। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্লথগতি, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনাকাক্ষিত প্রতিবন্ধকতায় পড়ার খবর আমাদের স্বভাবতই হতাশ করে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নের পেছনে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও দেশে ট্রেনের গতি যেমন বাড়েনি, তেমনি বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে রেলের উন্নয়ন পরিকল্পনার মান নিয়ে। এ অভিযোগ আশা করি অতি শীঘ্রই অসত্যে পরিণত হবে এবং আমাদের প্রত্যাশা, ঢাকাচট্টগ্রাম রেল পথে যাত্রার সময় কমে যাওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যাত্রীরা প্রত্যক্ষ করবে এ উন্নয়ন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে