ভোটকেন্দ্রে হিরো আলমের ওপর হামলা

কয়েকজন আটক ।। এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করবেন না তিনি

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৮ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

ভোটের শেষ মুহূর্তে ঢাকা১৭ আসনে উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তিনি এ হামলার মুখে পড়েন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা এই হামলার পেছনে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন হিরো আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. ইলিয়াস। তিনি বলেন, হামলার শিকার হওয়ার পর একতারা প্রতীকের প্রার্থী রামপুরার বেটার লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে হিরো আলম জানিয়েছেন তিনি এই সরকারের অধীনে জীবনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। পাশাপাশি এই নির্বাচনও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর হিরো আলমের ওপর হামলার ব্যাপারে নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেছেন, হামলার সত্য উন্মোচিত হোক। এদিকে হিরো আলমকে মারধরের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ঢোকার আগে স্কুলের মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তোলেন হিরো আলম। তখন হামলাকারীদের কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরেন এবং বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না।’ এরপর হিরো আলমকে ধাওয়া শুরু করেন। তখন কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে ধরে স্কুলের গেইটের দিকে নিয়া যান।

ভিডিওতে দেখা গেছে, স্কুলের থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা কেন্দ্রে ফিরে যায়। এই সুযোগে ধাওয়াকারীরা হিরো আলমকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের ওপর ফেলে দেন। এরপর চলে একতারা প্রতীকের প্রার্থীর ওপর লাথি, কিলঘুষি, ধস্তাধস্তি। নৌকার ব্যাজ পরা হামলাকারীদের কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটাও ছিল। মারধরের মুখে দৌড়ে পালান হিরো আলম।

বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সোয়া ৩টার দিকে বনানীর বিদ্যানিকেতেন কেন্দ্রে কিছু ইউটিউবার নিয়ে ঢোকেন হিরো আলম। সেখানে বাধা পেয়ে তিনি কেন্দ্রের বাইরে এলে সেখানকার লোকজনের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি বাধে। একপর্যায়ে বহিরাগতরা তাকে ধাওয়া করে।

এ বিষয়ে ঢাকার অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, হিরো আলমের উপর হামলা হয়েছেএ ধরনের একটা বিষয় আমরা শুনেছি। এখনও এ বিষয়ে লিখিত কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান বলেন, ভোট শেষ হওয়ার ৫১০ মিনিট আগে বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রের বাইরে রাস্তার উপরে হামলার খবর পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছে তা জানতে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খতিয়ে দেখে পরবর্তী করণীয় জানানো সম্ভব হবে।

কয়েকজন আটক : হিরো আলমকে মারধরের ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটকরা হলেন বনানী থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল্লাহ বিপ্লব ও সানোয়ার গাজী। বাকিদের নাম প্রাথমিকভাবে জানা যায়নি। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ বলেন, হিরো আলমকে মারধরের ঘটনায় সন্দেহজনক হিসেবে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচন করব না : হিরো আলম এর আগেও বিভিন্ন নির্বাচনে হামলামারধরের শিকার হন। এসব পরিস্থিতি আমলে নিয়ে তিনি মনে করেন বর্তমান সরকারের অধীনে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। যে কারণে এই সরকারের অধীনে জীবনে আর কোনো নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন না। পাশাপাশি এই নির্বাচনকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গতকাল বেটার লাইফ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রাজধানীর রামপুরায় মহানগরও প্রজেক্টের ডি ব্লকের দুই নম্বর রোডে নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। হিরো আলম বলেন, সকাল থেকে আমার ওপর হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী বিকালে তারা জয় বাংলা স্লোগান তুলে আমার ওপর হামলা করে। জোর করে ব্যালটে সিল মারতে বাধা দেওয়ায় তারা আমার ওপর হামলা করে। এ বিষয়ে আমি আমেরিকান অ্যাম্বেসি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যত যায়গায় চিঠি দেওয়ার দরকার দেব। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমি এর আগে অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তা আমলে নেয়নি। এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমার আস্থা নেই।

তিনি বলেন, বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে আমরা যখন ঢুকি, দেখতে পাই আওয়ামী লীগের লোকজন ব্যালটে সিল মারছে। আমরা তখন তাদের বলি কেন সিল মারছেন? এ কথা বলা কি আমার অপরাধ হয়েছে? পরে সেখান থেকে বের হবার পর তারা আমার ওপর হামলা করে।

বলা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া কার্ড নিয়ে আপনার লোকজন কেন্দ্রে ঢুকে বিশৃঙ্খলা করে। আপনার লোকজনই আপনাকে মারধর করেছে। বনানীতে আটক হওয়া এক যুবক এ দাবি করে। এ ব্যাপারে হিরো আলম বলেন, আমার ওপর যারা হামলা করেছে তারা আওয়ামী লীগের লোক। যে ব্যক্তি বলেছে সে আমার লোক, তাকে আমার সামনে আনা হোক। আর সে যদি বলেই থাকে সে আমাকে মেরেছে তাহলে তাকে শাস্তি দেন; তাকে রিমান্ডে নেন। আমার এতে কোনো আপত্তি নেই। আমি চাই আমাকে যারা মেরেছে তাদের শাস্তি হোক। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। আমার লোক যদি আমার ওপর হামলা করে তাহলে আমি কি তাকে চিনব না?

আরাফাত বললেন, সত্য উন্মোচিত হোক : হিরো আলমের ওপর হামলার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাত। ‘হামলার সত্য উন্মোচিত হোক’ এমন দাবি করেছেন তিনি।

গতকাল ভোটগ্রহণ শেষে বিকালে সংবাদ সম্মেলনে আরাফাত বলেন, মুখোশ উন্মোচন জরুরি। এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা আটক হোক। ইতোমধ্যে যারা আটক হয়েছে তারা সন্ত্রাসী ও ষড়যন্ত্রকারী।

ভোটকেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে অভিযোগ উঠেছে, আমি চাই অভিযোগগুলো প্রমাণিত হোক। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে এই অভিযোগ তদন্ত করে বের করার।

এত পরিশ্রমের পরেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম কেন, জানতে চান সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে গত কয়েক দিনে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দিনরাত খেটেছেন, চেষ্টা করেছেন। তারপরও আমাদের আবার একটু পর্যালোচনা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৮৮১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী নৌকার আরাফাত
পরবর্তী নিবন্ধমানি লন্ডারিং মামলায় জি কে শামীমের ১০ বছরের সাজা