প্রফেসর ডা. এম এ তাহের খানের ইন্তেকাল

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৭ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

দেশের কিংবদন্তীতুল্য গাইনোকোলোজিস্ট, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. এম এ তাহের খান আর নেই। গতকাল রবিবার সকাল ৮টা নাগাদ নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহিরাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণাগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল বাদ আছর নগরীর জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে মরহুমের লাশ নাসিরাবাদস্থ এমইএস কলেজ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অবস এন্ড গাইনী বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর (ডা.) এম এ তাহের খানের মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। গতকাল সকালে তাঁর মরদেহ দীর্ঘদিনের কর্মস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেয়া হয়। সেখানে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ইসমাইল খান, মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর সাহেনা আক্তার, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামিম আহসানসহ সর্বস্তরের চিকিৎসকগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ মরদেহ আনা হয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে। যেখানে তিনি পরিচালনা পরিষদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটি, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষক শিক্ষিকা, ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও হাসপাতালের আজীবন সদস্যগণ তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রফেসর এম এ তাহের খানের মরদেহ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে আনা হলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রফেসর এম এ তাহের খান ১৯৪৪ সালের ১লা জানুয়ারি লক্ষীপুর জেলার বারালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে ইংল্যান্ডে যান এবং ১৯৭২ থেকে১৯৮৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে আয়ারল্যান্ড থেকে উএঙ, ১৯৮২ সালে লন্ডন থেকে গজঈঙএ এবং ১৯৯৪ সালে লন্ডন থেকে ঋজঈঙএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জন তাকে এফসিপিএসএ ভূষিত করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বদলি হন এবং ১৯৯২ সালে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। তিনি ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান এর দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ (অনারারী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজকে দেশের অন্যতম সেরা বেসরকারী মেডিকেল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এদিকে, মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ এম এ তাহের খানের মৃত্যুতে সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান এবং সাধারণ সম্পাদক ডা. মোঃ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ মোরশেদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আজাদ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি ও বিএমএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মোরশেদুল আলম কাদেরী, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক এবং সিভিও পেট্রোক্যামিকেল রিফাইনারী লি:, পিএলসির চেয়ারম্যান শামসুল আলম শামীম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) চট্টগ্রাম জেলার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) সহ সভাপতি ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ডাঃ শেখ শফিউল আজম ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোহাম্মদ শরীফ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিদাতারা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তারা বলেন, কিংবদন্তীতুল্য চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এম এ তাহের খানের মৃত্যু চট্টগ্রামের চিকিৎসা খাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি সহজে পূরণ হওয়ার নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিআইজি-অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার ৫১ কর্মকর্তা বদলি
পরবর্তী নিবন্ধব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক : তথ্যমন্ত্রী