সার পরিবহনে গতি এবং শৃঙ্খলা আনতে ৬১ লাখ টাকা বাড়তি খরচ করে কাজ দেয়া হয়। চার দফা টেন্ডার আহ্বানের পর ঠিকাদারও নিয়োগ দেয়া হয়। তবুও সবকিছু চলছে আগের নিয়মে। চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের সার পরিবহনে দশ টনবাহী ট্রাকপ্রতি ৫শ টাকা এবং ১৫ টনের ট্রাকপ্রতি ১৫শ টাকা করে চাঁদাবাজি চলছে।
সূত্র জানায়, দেশের ইউরিয়া সার উৎপাদনের অন্যতম বৃহৎ কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল) থেকে চলতি অর্থবছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন সার ট্রাকে বোঝাইয়ের জন্য লেবার কন্ট্রাক্টর নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ব্যাগ গোডাউন ১ এবং ২, ব্যাগিং ফ্লোর, ডিএপিএফসিএলের গোডাউন, কারখানা ও আবাসিক এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বস্তাভর্তী ইউরিয়া সার সর্বোচ্চ ১০/১৫ বস্তা উচ্চতার স্ট্যাকিং হতে হুক ব্যবহার ছাড়া লেবার দ্বারা তিন সারিতে ট্রাকে লোড করার জন্য এই ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ইতোপূর্বে তিন দফা টেন্ডার আহ্বান করা হলেও তা ভেস্তে যায়। চতুর্থ দফায় আহূত টেন্ডার ২৪ মে খোলা হয়। এতে নয়টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। টেন্ডারে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকায় কাজ করার দর উল্লেখ করে স্থানীয় ফকিরহাটের মেসার্স রায়হানা এন্টারপ্রাইজ সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। কিন্তু পরে দেখা যায়, দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স আনোয়ারা ট্রান্সপোর্টকে ২ কোটি ১১ লাখ টাকায় কাজটি প্রদান করা হয়েছে। তারা মেসার্স রায়হানা এন্টারপ্রাইজের চেয়ে ৬১ লাখ টাকা বেশি দর উল্লেখ করেও কাজটি পেয়েছে। গত অর্থবছরেও মেসার্স আনোয়ারা ট্রান্সপোর্ট লেবার কন্ট্রাক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সার পরিবহনকালে ১০ টনের ট্রাকপ্রতি ৫শ টাকা এবং ১৫ টনের ট্রাকপ্রতি ১৫শ টাকা করে বাড়তি আদায় করার অভিযোগ রয়েছে।
সার পরিবহনকালে এই চাঁদাবাজি বন্ধ করার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের টেন্ডারে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। এতে আগেকার ট্রাকে ৮ টন সার বোঝাইয়ের স্থলে গোডাউন থেকে ১০ টন করে আড়াই লাখ টন এবং সরাসরি গোডাউন হতে ১৫ টন করে এক লাখ টন সার পরিবহনের শর্ত দেয়া হয়। বাড়তি কাজের নামে ডিলারদের কাছ থেকে ট্রাকপ্রতি বাড়তি টাকা আদায়ের সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
কিন্তু নতুন ধাঁচের কাজের জন্য নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে বাড়তি টাকা প্রদান করা হলেও কাজ চলছে আগের নিয়মেই। আগের মতো ১০ টনের ট্রাক থেকে বাড়তি দুই টনের জন্য ৫শ টাকা এবং ১৫ টনের ট্রাক থেকে বাড়তি সাত টনের জন্য ১৫শ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ডিলাররা তাদের বাড়তি এই খরচের টাকা বস্তাপ্রতি দেড় থেকে দুইশ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে কৃষকদের কাছ থেকে আদায় করছেন। অর্থাৎ সিইউএফএলের ব্যাগিং ফ্লোরের চাঁদাবাজির অর্থের যোগান কৃষকদের দিতে হচ্ছে।
সূত্র বলেছে, নতুন ধাঁচের কাজের জন্য নতুন করে টেন্ডার আহ্বান এবং নতুন ঠিকাদার নিয়োগের সুযোগ থাকলেও প্রচলিত নিয়ম না মেনে বাড়তি দরে আগের কোম্পানিকেই কাজটি দেয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতা না হয়েও এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজটি পায়। বিষয়টি রহস্যজনক মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, ঠিকাদার নিয়োগে সবকিছু ঠিক থাকলে সর্বনিম্ন দরদাতাকেই কাজ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ এই নিয়ম না মেনে ৬১ লাখ টাকা বাড়তি খরচ করে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজটি প্রদান করেছে। সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে গত বছর কাজ করে নানাভাবে অভিযুক্ত হওয়া কোম্পানিকেই কাজ দেয়া হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিইউএফএলের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রচলিত নিয়মকানুন অনুসরণ করেই দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। তবে তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।