চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের চান্দগাঁও থানার সম্মেলনে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি–সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হলের চেয়ার ভাঙচুর এবং ছুঁড়ে ফেলা হয়। সম্মেলন চলাকালে বাইর থেকে হঠাৎ একটি মিছিল গিয়ে চেয়ার ভাঙচুর করে চলে আসে। এসময় অপর পক্ষের কর্মীরা তাদেরকে ধাওয়া করে। দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকসহ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছবি ছিঁড়ে ফেলা হয়। এতে ৩–৪ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা যায়। সংঘর্ষের ঘটনায় সম্মেলনের কার্যক্রম কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ আসার পর আবার অনুষ্ঠান শুরু হয়। গতকাল শনিবার নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন আরবি কনভেনশন সেন্টারে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলন শুরুর পরপরই দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে স্লোগান–পাল্টা স্লোগান দেয়া শুরু করে। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি এবং সংঘর্ষ বাধে। এদিকে নগরীতে থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলনকে ঘিরে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুইপক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা (১২ সহ–সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক) বিবৃতির মাধ্যমে চলমান থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন।
এই ব্যাপারে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু বলেন, আমরা নগরীতে এই পর্যন্ত পাঁচটি থানাসহ অনেকগুলো ওয়ার্ডের সম্মেলন করেছি। কই কোথাও তো একটা ‘টু’ শব্দ পর্যন্ত হয়নি। আজকে তারা বাইরের কিছু ছেলে পাঠিয়েছে। তারা মিছিল নিয়ে ঢুকে কতগুলো চেয়ার ভাংচুর করে চলে গেছে। আর তারা একটি বিবৃতি দিয়েছে– সেখানে তারা লিখেছে এমপি নোমান আল মাহমুদ আমরা সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে ফোন করেছে। এটা ডাহা মিথ্যা। আমাদেরকে ফোন করলে তো কল লিস্টে থাকবে। তাদেরকে দেখাতে বলেন– যদি দেখাতে না পারেন তাহলে একজন এমপির সঙ্গে মিথ্যা বলার অপরাধে তাদের বহিষ্কার করা উচিত। বরং আমি গতকাল (গত শুক্রবার) নোমান আল মাহমুদকে ফোন করেছি। তিনি আমাকে হেলালদের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। আমরা যে কর্মসূচি পালন করছি তা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হচ্ছে। কেন্দ্রে থেকে নগরীর প্রতিটি থানার সম্মেলনে একজন করে কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। শুধু চট্টগ্রামে নয় সারাদেশে একযোগে ওয়ার্ডে–থানায় সম্মেলন হচ্ছে। আজকে (গতকাল) চান্দগাঁও সম্মেলনেও কেন্দ্রীয় উপ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শ্যামল গোস্বামী উপস্থিত ছিলেন। আমি সংগঠনের একজন সভাপতি, গতকাল হেলাল (সহ–সভাপতি হেলাল উদ্দিন) আমাকে একটি হোটেল থেকে ফোন করে হোটেলে তার সঙ্গে বসতে বলেছেন। একজন সভাপতি কি হোটেলের গিয়ে সহ–সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করে? নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে যদি কোনো একজন সহ–সভাপতি ফোন করে বলেন যে হোটেলে বসার জন্য, উনারা কি হোটেলে যাবেন? তাদের যদি কোনো কথা থাকে সেগুলো আমাদের কার্যকরী কমিটির সভায় বলতে পারেন। আমাদের সব কর্মসূচি তো সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে করা হয়। তারা তো সেখানে যায় না। বাইরে এটা–সেটা বলে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। চান্দগাঁওয়ের সম্মেলনের সবকিছুতে তো তাদের গ্রুপের মিনহাজুল আবেদীন সায়েম ছিল। ক্লাব ঠিক করা থেকে সব কিছুতে ছিল। গতকাল (গত শুক্রবার) পর্যন্ত ছিল। ও সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। আবার রাতের মধ্যে উল্টে গেছে। হেলাল তো ৫০টি প্রোগ্রামের মধ্যে ৪৫টিতে আসে না। পাঁচটিতে আসে মাত্র।
আ জ ম নাছিরের অনুসারী ১২ নেতা আসন্ন ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচন উপলক্ষে সকল ধরনের থানা এবং ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধের জন্য সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। কোনোরকম সমন্বয় ছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছে মাফিক একতরফা থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন করায় একই চিঠিতে তারা চান্দগাঁও থানার সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্তের কথাও জানান।
চিঠিতে বলা হয়, সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভূতভাবে থানা ও ওয়ার্ডে যে সম্মেলন করা হচ্ছে তা সংশোধনের জন্য গত তিনদিন ধরে আপনাদেরকে ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছি। আপনাদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও আপনাদের চরম সমন্বয়হীনতা এবং অসহযোগিতায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে জয়ী করতে প্রধানমন্ত্রী নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনসহ সকল ওয়ার্ড–থানা সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিতকায় চট্টগ্রাম–৮ আসনের সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনকে প্রধান্য দিয়ে উনার নির্বাচনী এলাকায় সকল থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত রাখার জন্য আপনাদেরকে বারবার ফোন করলেও আপনারা ফোন রিসিভ করেননি। আপনাদের এই অসহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডে সংগঠনের গতিশীলতার চরম অন্তরায় বলে আমরা মনে করি। তাই আমরা চান্দগাঁও থানার সম্মেলন বয়কট করলাম এবং আপনাদের দ্বারা চলমান সমন্বয়হীনতা–বিশৃঙ্খলা এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী এই ধরনের কার্যক্রম চলমান থাকলে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য থাকব।
চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ–সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, সুজিত দাশ, দেলোয়ার হোসেন, মনোয়ার জাহান মনি, মুহম্মদ আজিজ মিসির, আবদুর রশিদ লোকমান, মিনহাজুল আবেদীন সায়েম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুদ্দীন, আবদুল আল মামুন, মো. সরফরাজ নেওয়াজ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ খান ও মো. সালাহ উদ্দিন।
এই ব্যাপারে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা নগরীতে থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার জন্য বারবার সভাপতি–সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। তারা বসেনি। তারা কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়া নিজেদের মতো করে সম্মেলন করে ফেলছেন। আজকে (গতকাল শনিবার) চান্দগাঁওয়ে সম্মেলন হয়েছে, সেখানে আগ্রাবাদ থেকে ট্রাকে ট্রাকে লোক এসেছে। সম্মেলন তো কর্মী সভা বা জনসভা না। সম্মেলন শুধু ঐ থানার বা ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা এবং কাউন্সিলর–ডেলিগেটরা থাকবেন। নোমান ভাই (নোমান আল মাহমুদ এমপি) সভাপতি–সাধারণ সম্পাদককে ফোন করেছেন, উনারা ফোন ধরেননি। তাই হেলাল ভাইসহ আমরা ১২ জন বসেছি। তাদের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি একতরফা সম্মেলন আমরা বয়কট করেছি।