চট্টগ্রামের সিএমএম (চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) আদালতে ২০২১ সালের আগস্টে মামলা ছিল ৫০ হাজার। চলতি বছরের মে পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার ২০৮টি। অর্থাৎ মাত্র ২১ মাসে মামলা বেড়েছে ২ হাজার ২০৮টি। গড় হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতি মাসে সেখানে যুক্ত হয়েছে ১০৫টিরও বেশি মামলা।
আইনজীবীরা বলছেন, সিএমএম আদালতে প্রতিনিয়ত মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকলেও বাড়ছে না ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সংখ্যা। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সময় ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে চলত সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেসি কার্যক্রম। পরে ২০০৮ সালে নতুন একটি পদ বাড়ানো হয়। গত ১৫ বছর ধরে তাই রয়েছে। এর মধ্যে মামলা বেড়ে হয়েছে তিনগুণ। এখন ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সংখ্যা বাড়ানো গেলে মামলা জট কমে আসবে।
আদালত সূত্র জানায়, মামলার সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সিএমএম আদালতে নতুন ম্যাজিস্ট্রেটের পদসহ সহায়ক কর্মচারীর পদ সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে আবেদন জানানো হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারবার এই আবেদন জানানো হয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবরের আবেদনে নতুন ছয়টি আদালত (দুটি এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চারটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট), দুইটি স্টেনোগ্রাফার, চারটি স্টেনো–টাইপিস্ট, ছয়টি বেঞ্চ সহকারী ও ছয়টি এমএলএসএস পদ; ২০১৬ সালের ১৪ জুন ও ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারির পৃথক আবেদনে নতুন নয়টি আদালত (তিনটি এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও ছয়টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট), তিনটি স্টেনোগ্রাফার, ছয়টি স্টেনো–টাইপিস্ট, নয়টি বেঞ্চ সহকারী ও নয়টি অফিস সহায়ক পদ এবং সর্বশেষ গত বছরের ৩০ মে’র আবেদনে নতুন ১৩টি আদালত (তিনটি এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১০টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট), তিনটি সাঁট–লিপিকার কাম–কম্পিউটার অপারেটর, ১০টি সাঁট–মুদ্রাক্ষরিক কাম–কম্পিউটার অপারেটর, ১৩টি বেঞ্চ সহকারী ও ১৩টি অফিস সহায়কের পদ সৃষ্টির জন্য প্রস্তাব করা হয়। যেখানে প্রস্তাবিত আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন ও অফিস সরঞ্জামাদিও চাওয়া হয়।
সর্বশেষ করা আবেদনে বলা হয়, ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে একজন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও তিনজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ছয়টি থানা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় থানার সংখ্যা ১৬টি। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের পর একজন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও পাঁচ জন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ম্যাজিস্ট্রেসি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তখন বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ১০৬টি। ২০০৮ সালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সংখ্যা আরো একটি বৃদ্ধি করে ছয়টি করা হয়। বর্তমানে একজন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, একজন এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও ছয়জন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ম্যাজিস্ট্রেসি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আবেদনে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির প্রতিটি আদালতে বর্তমানে গড়ে সাড়ে ছয় হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও মহানগরীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন নতুন অপরাধ প্রবণতা ও মামলার সংখ্যা বৃদ্ধ পাচ্ছে। ২০০৭ ও ২০০৮ সালের তুলনায় বর্তমানে চলমান মামলার সংখ্যা তিনগুণের অধিক। আদালতের সংখ্যা বাড়ানো না হলে প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা দায়ের হয়ে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা আরও বাড়বে। মামলার বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচার প্রার্থী জনগণের ন্যায় বিচারপ্রাপ্তি দুরূহ হবে এবং হতাশাগ্রস্ত হয়ে বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারাবে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের তিনটি ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের ১০টি নতুন পদ এবং আদালতের সংশ্লিষ্ট সহায়ক কর্মচারীর পদ সৃজন করা আবশ্যক বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে মহানগর পিপি আব্দুর রশিদ আজাদীকে বলেন, মহানগর ম্যাজিস্ট্রেসিতে মামলা বেড়ে গেছে। অন্তত চার–পাঁচটি নতুন ম্যাজিস্ট্রেসের পদ সৃজন করা প্রয়োজন। বর্তমানে বিচার কাজ সামাল দিতে ম্যাজিস্ট্রেটদের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমলী ফাইল, পুলিশ ফাইল ধরতেই সময় চলে যাচ্ছে। ট্রায়ালে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। বিচারপ্রার্থীরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচানায় নিয়ে নতুন ম্যাজিস্ট্রেটের পদ বাড়ানো উচিৎ। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে সম্প্রতি এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বিচারক বেশি থাকলে শুনানি বেশি হয়। শুনানি বেশি করা গেলে মামলা দ্রুত বিচারের জন্য প্রস্তুত হয় ও শেষ হয়। সিএমএম আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের পদ যা রয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এ জন্য নতুন পদ সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে উচ্চ আদালত ও আইন মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়। এখনো আমরা নতুন ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টির জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আশা করছি, নতুন ম্যাজিস্ট্রেটের পদ সৃষ্টির বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব দেবেন।