মধ্য বয়সের প্রেম ও রঙ বদলের ভালোবাসা

নুরুননাহার ডলি | মঙ্গলবার , ১১ জুলাই, ২০২৩ at ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ঘটনা : মনে করি তার নাম হুজাইফা। দেখতে সুন্দর, নামকরা কলেজে অনার্স পড়ে, ভালো একটা পরিবারে সন্তান। পাঁচ ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন। একজনের প্রেমে পড়লো, ভালোবাসলো, পরিবারের সাথে অনেক যুদ্ধ করার পর পরিণয়ে আবদ্ধ হয়ে সংসার শুরু করলো। কত পরিশ্রম করে দুজনে মিলে সংসারের সমস্ত কষ্টকে ছাপিয়ে সুখী হতে চায়লো। কোল জুড়ে ছেলে, মেয়ে এলো। এবার সন্তানের ভরণপোষণ শিক্ষা সব সামলাতে সামলাতে ধীরে ধীরে কখন যেন স্বামীটি কোথায় হারিয়ে গেছে হুজাইফার। দূরত্ব তৈরি হতে হতে এক সময় হুজাইফা দেখলো তার ভালোবাসা জীবনের রঙমঞ্চে হারিয়ে গেছে। অনেক চেষ্টা করলো, কিন্তু মধ্য বয়সে এসে তার ভালোবাসার মানুষটি অন্য কোথাও ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছে। বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না, কউকে বলতেও পারে না, সহ্যও করতে পারে না। প্রেম করে বিয়ে করেছে বলে শ্বশুর শাশুড়ীও হুজাইফাকে পছন্দ করে না। এক সময় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হলো হুজাইফা। ছেলে মেয়ে ভাইয়েরা অনেক চেষ্টা করলো, ডাক্তার ঔষধ পথ্য সব মিলিয়ে কতো সমস্যা পাড়ি দিতে হলো পরিবারটিকে। কিন্তু হুজাইফার ভালোবাসা আরো দূরে সরে গেল। একটিবারও হুজাইফার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো না, আমি তোমার পাশে আছি। এই মধ্য বয়সে এসে ভালোবাসার রঙ বদলের খেলায় হুজাইফা হেরে গেছে। হুজাইফার ছেলে মেয়ে বলেছে লোকটাকে ডিভোর্স দিতে। খুব শান্ত মাথায় হুজাইফা ভাবছে কিছুটা সময় নিচ্ছে, যেহেতু মধ্য বয়সের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তাকে বিয়েই করে ফেলেছে তাই হুজাইফা আর তাকে আটকে রাখবে না কোনো বাঁধনে। শান্ত ধীর স্থির তার ভাবনা। আমরা অপেক্ষা করি কী হয় দেখার জন্য। নিয়তি হুজাইফা কে কোথায় আর কতদূর নিয়ে যায় দেখার জন্য। ‘আমি চিরকাল প্রেমের ও কাঙাল’।

ঘটনা: মনে করি এর নাম মালতি। মালতিও মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। ভালোবেসেছে তার অবস্থান থেকে অনেক নিচুস্তরের কাউকে। কিশোরী মনের ভালোবাসা, কঠিন বিষয়। পরিবার কখনো রাজি হবে না। তাই প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলো। মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের মেয়েটি স্বামীর সংসারে অনেক কষ্টই করতে লাগলো। পর পর তিনটি সন্তানের জন্ম হলো তাদের। দিন তো চলছিল। কিন্তু বাচ্চাদের দেখাশুনা সংসারের কাজের চাপে দিন দিন সদা লাস্যময়ী মেয়েটার রঙ কালচেটে হতে লাগলো। নিজেকে যত্ন আত্তি করার সময় কোথায়? মালতির মুখেই শুনুন, ‘ও যদি বলতো বা আমি যদি বুঝতে পারতাম আমার ভালোবাসা, বাচ্চাদের কচি মুখ, সংসার এগুলো না, শরীর সর্বস্ব ভালোবাসা তার প্রয়োজন তবে কিসের সংসার, কিসের বাচ্চা কাচ্চা, সব ফেলে নিজেকে ই দেখতাম। কিন্তু সেই শুয়োরের বাচ্চা ফর্সা ধলা পয়তাল্লিশ বছর বয়সী ডিভোর্সী এক বেডির লগে প্রেম করে। বিয়া করে নাই, কিন্তু অর লগে থাকে। আমার ভালোবাসার ভাগ আমি কেউরে দিমু না। হারমজাদারে পুলিশে দিমু, র‌্যাবে দিমু, অর হাড্ডি গুড়িয়ে দিমু, আমি মানুষের বাসায় কাজ করি এখন, বাচ্চাদের খরচ পর্যন্ত দেয় না। বড় পোলা সেভেন এ পড়ে। মেয়েটা থ্রি তে পড়ে। খরচ দেয় না তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ হইয়া গেছে। আফা গো আমি অরে ছাড়ুম না।’

ভালোবাসা রঙ বদলায়। সত্যি ই তাই। এই সব বিষয়ের সমাধান জানা নেই। ভালোলাগা আর ভালোবাসা এক নয়। মধ্যবয়সেও ভালো কাউকে লাগতেই পারে। কিন্তু আমার পরিবার, সমাজ, সংস্কার, আমার ধর্ম কে ধারণ করে আমাকে পথ চলতে হবে। জানি, বিশ্বাসও করি, ভালোবাসা জাত পাত মানে না, মানে না বয়স, মানেনা ধর্মও। অনেক কে দেখেছি অর্ধেক বয়সের জীবনসঙ্গী নিয়ে সুখী হতে। আবার দেখেছি অসুখী হতে। আসলে– ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়, কেউ পায়, কেউ বা হারায়, তাতে প্রেমিকের কী আসে যায়’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ
পরবর্তী নিবন্ধডেঙ্গু প্রতিরোধে যৌথ উদ্যোগ নিন