‘জনি ১১’ দারুণ একটি থ্রিলার উপন্যাস। পৃথিবীর পাঠকদের এক নম্বর জায়গাটি দখল করে আছে এখন সাইকো থ্রিলার উপন্যাস বা অপরাধ কাহিনি। এইসব গল্প পাঠকের মস্তিস্কে ঝড় তোলার ক্ষমতা রাখে।
একটি খুনেরই রহস্যভেদ করতেই আসছে ‘জনি ১১’। লেখক বইয়ের প্রতি পরতে–পরতে রেখেছেন রহস্যের গন্ধ। অপরাধের অনেক ক্লু বা নিদর্শন থাকে। পড়তে পড়তে টানটান উত্তেজনা অনুভব করবেন পাঠকরা। পাঠকের মনে এসব সংকেত ও ক্লু খেলা করতে থাকবে বইয়ের শেষ পাতা পর্যন্ত।
জনি ১১ কে সহযোগিতা করতে আসেন কম বয়সের এক সুন্দরী রহস্যময় নারী। চঞ্চলা চপলা নারীর টানা টানা হরিণী চোখের মাঝে হারিয়ে যাবে যে কোন পুরুষ। তিনি আবার একজন স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসার। উনাকে নিয়ে গল্পকার দারুণভাবে গোপনীয়তা বজায় রেখেছেন। যা পাঠক পড়ার মাধ্যমে রহস্যময়তা উপভোগ করবেন।
ঘটনা ঘটে যাচ্ছে একের পর এক। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। বোঝা যাচ্ছে না কী ঘটছে, কেন ঘটছে! এদিকে একে একে বেড়ে চলেছে খুন, রহস্যজনক মৃত্যু। সন্ধান পাওয়া গেছে উদ্ভট ভাইরাসের। চারদিকে উত্তেজনা। জনমনে ছড়িয়ে পড়ছে আতংক।
এই খুনের নেপথ্যে কারা রয়েছেন! এই বিষটি স্পর্শকাতর হওয়ায় খুনের জট খুলতে ‘জনি১১’কে নিয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের গোপনীয় বৈঠক।
বইটি শুরু করেছেন লেখক পরপর দুটি গুলির শব্দ দিয়ে। এক মধ্যবয়সী লোক দুষ্কৃতিকারীর গুলিতে নিহত হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। রক্তে রাস্তা ভিজে যাচ্ছে। টহল পুলিশ অস্ত্র উঁচিয়ে আসতে আসতে চারপাশ ফাঁকা হয়ে গেছে।
ওসি সাহেব লাশের কাছে এসে দাঁড়ালেন। তখনই উনার মোবাইল বেজে উঠল। ফোন করেছেন অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রধান অফিসার শাফায়েত হোসেন।
শফিক সাহেব ঘামতে লাগলো। দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে উনার এলাকায় খুন। আবার অনেক মানুষের সামনে। ফরেনসিক টিম চলে এসেছে। উনারা আলামত সংগ্রহ করছে।
শফিক সাহেব টেনশনে পড়ে গেছে। উনার বউয়ের শরীরটা তেমন ভালো নেই। তারপর দু’দিন আগে খুন হওয়া ব্যক্তি আর আজকের খুনের স্টাইল একই। এইটি কোন সিরিয়াল কিলারের কাজ হয়তো।
এর মধ্যে খবর আসে জিইসি মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে এসে নাক–মুখ থেকে কৃমি বের হচ্ছে। সাথে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে। কী বীভৎস মৃত্যু!
পুলিশের সোর্স যখন খবর দিতে ব্যর্থ তখন ইমতিয়াজ সাহেব লিলির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমাদের একমাত্র সাহায্য করতে পারেন একজন। যার দিন কাটে শেয়ার মার্কেটের সূচক দেখে। এবং উনি বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন বই পড়ে, সিনেমা দেখে, আর ঘুরাঘুরি করে।
সাফায়েত সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। দু–তিন বছর আগে একজন আলোচিত সিরিয়াল কিলার ছিল। যে খুন করে মাথা কেটে ফেলতো। এই কিলারকে ধরিয়ে দিয়েছিল উনি ‘জনি১১’।
নামটা শোনার পর ইমতিয়াজ সাহেব বললেন স্যার আমাদের যত আন্ডারকভার অফিসার আছে সবার নাম তো জানি কিন্তু ‘জনি ১১’ কে? একটা ফাইলে দেখেছি এই নামটা আছে। সেই ফাইলের ভেতরে উনার কোনো ছবি নেই। শুধু বিশেষ কিছু কোড রয়েছে। আবার এইসব কোড শুধু উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই জানে। তার আসল নাম আদিল রহমান। দেশের বড় বড় পত্রিকার সাংবাদিকরা উনাকে চেনেন। পত্রিকায় তার সম্পর্কে লেখেন কিন্তু ছবি দেয় না। শুধু ‘জনি ১১’ নামটা দেয়। লেখক চমৎকারভাবে গোপনীয়তা রক্ষা করেছেন। এবং উত্তজেনার ভেতর রেখেছেন পাঠককে। ‘জনি ১১’ কে খুঁজে বের করার জন্য শহরের ব্যস্ততম এলাকা আন্দরকিল্লায় নিয়ে এসেছেন অফিসার। উনার রুমে প্রবেশের পর সবাই চমকে যায়। আদিল রহমানের মা চা দিয়ে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে চলে যান। চা শেষ করার আগেই আদিল রহমান রুমে ঢুকলেন। তিনজনই দাঁড়িয়ে গেলেন। সাফায়েত সাহেব হাত মিলিয়ে লিলি এবং ইমতিয়াজ সাহেবের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। আদিল সাহেব লিলির সাথে হাত মেলানোর পর বললেন, আপনি অনেক ভালো গুলি চালাতে পারেন। লিলি চমকে উঠলেন।
উত্তর দেন অ্যাস্ট্রোলজার?
পাঠকের জন্য গল্পকার বইয়ে টানটান উত্তেজনা রেখেছেন। খবর পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একজন দোকানদারের নাক–মুখ–চোখ দিয়ে কৃমি বের হয়ে একইভাবে মারা গেছে। এতেই বুঝা যাচ্ছে খুন আর কৃমির ব্যাপারটি কাকতালীয় নয়। একই সূত্রে গাথা। সাফায়েত সাহেব ‘জনি ১১’ সাথে কেসটা সমাধান করতে সাথে দেন মিস লিলিকে। ঘুরে যায় রহস্যের মোড়।
আমিও রোমান্টিক এবং গোপনীয় বিষয়ে সব তথ্য রেখে দিলাম পাঠকের মন্তব্যের জন্য।
আর যারা গুলিতে খুন হচ্ছে তারা কেউ সাধারণ মানুষ না।
তাহলে তারা কারা?
তারা সবাই স্পেশাল ব্যঞ্চের গোপন মিশনে থাকা অফিসার। তাদের একজনের লাশ হিম ঘরে পড়ে আছে। এবং আজকে যিনি মারা গেলো তাদের হাতে একই রকমের দাগ রয়েছে। এমন দাগ শুধু যারা নিয়মিত গুলি চালায় তাদের হাতে
থাকে। এই অফিসারদের সাংকেতিক নাম ‘টু ওয়ান টু নাইন’। এর মাঝে একটি নাম আসছে আরবিএম। কে এই আরবিএম? আবার নতুন করে সৃষ্টি জটিলতাকে সামনে আনতে ‘জনি১১’ অফিসার লিলিকে নিয়ে কোন পথে হাঁটছেন? তাহলে সন্দেহ কী মামুন সরোয়ারের দিকে? মামুন সরোয়ার কেনইবা লিলি কে নিয়ে ডিনারে গিয়ে হাতে রিং পরিয়ে দিলেন?
টানটান উত্তেজনা নিয়ে লেখকের মতো আমিও পাঠকের মতামতের জন্য পুরো গল্পটা পড়ার জন্য অনুরোধ জানালাম। ‘জনি ১১’ উপন্যাসটি ‘চন্দ্রবিন্দু’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। বইটির মূল্য তিনশত টাকা।