বিনা অস্ত্রোপচারে ২৪ ঘণ্টায় ১৯ শিশুর জন্মদান

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | রবিবার , ৯ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসরা। এতে বদলে গেছে উপজেলার চিকিৎসা সেবার চিত্র। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ গর্ভবতী নারী নরমাল ডেলিভারিতে শিশুর জন্ম দিয়েছেন। তারমধ্যে ১০ জন ছেলে এবং ৯ জন মেয়ে শিশু। প্রতিটি শিশু এবং শিশুর মা সুস্থ আছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসক মিলে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। তাদের এই উদ্যোগ নজির সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসবের উদ্যোগ সফলতা লাভ করায় এটি চট্টগ্রাম জেলার মডেল হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

এদিকে গতকাল বিকেলে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে ডাক্তারনার্সসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী।

জানা যায়, উপজেলায় অলিগলিতে বেসরকারি হাসপাতাল আর ক্লিনিক হওয়ায় দালাল চক্রের কারণে নরমাল ডেলিভারি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এসব ক্লিনিক এবং হাসপাতালে সেবার পরিবর্তে শুরু হয়েছে প্রসূতি সিজারের নামে এক ধরনের ব্যবসা। আর অর্থের লোভে তাদের হয়ে কাজ করছে একটি দালাল চক্র। আবার গ্রামাঞ্চলে কিছু অদক্ষ, প্রশিক্ষণবিহীন ধাত্রী রয়েছেন যারা স্থানীয়ভাবে দাইমা বলে পরিচিত। এই দায়মা’র কারণে প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুঝুঁকি থাকে এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে প্রায়ই। এমন অনেক ঘটনার নজির রয়েছে এলাকায়। ক্লিনিকেও প্রসূতি ও শিশু মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষ ও সড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে নিরাপদে নরমাল ডেলিভারি করাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদের নেতৃত্বে সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন চিকিৎসক টিম ওয়ার্ক শুরু করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন রাশেদ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এই কাজ শুরু করেন সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকগণ। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে গর্ভবতীদের উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণায় তারা বিভিন্ন কৌশলও কাজে লাগিয়েছেন। এজন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক, চেয়ারম্যানমেম্বার, ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সেলিং প্রদান করেন। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. বিবি কুলসুম সুমি, ডা. নাজিয়া, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সালাউদ্দিন, সিনিয়র স্টাফ নার্স সুষমা সরকার, মিডওয়াইফ শারমিন, ফাতেমা তাসলিমা এবং নার্সিং সুপারভাইজার হোসনেয়ারা বেগম, নার্সিং ইনচার্জ ইন্দিরা চৌধুরী মিলে টিম ওয়ার্কের কারণে নরমাল ডেলিভারিতে আমরা সফল হচ্ছি।

অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে মোছাম্মৎ জেসমিন আকতার জানান, দেরি করে সন্তান নেয়ায় ও এলাকার কিছু লোকের কথায় ভয় পেয়েছিলাম। অনেকে ক্লিনিকে সিজার করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাঠকর্মী এবং চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে দায়িত্ব নিলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। এখানে নরমাল ডেলিভারিতে আমার সন্তান জন্মলাভ করেছে। আমি এবং ছেলে সুস্থ আছি আলহামদুলিল্লাহ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন রাশেদ জানান, ডেলিভারি হওয়ার পর জন্ম নেয়া শিশুর জন্য জামাকাপড়, মশারি ও ওই শিশুর মাকে উপহার দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দিনদিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না। পাশাপাশি কোনো প্রকার খরচ করতে হয় না রোগীর স্বজনদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোরবানির ঈদের ছুটিতে সড়কে নিহত ২৯৯
পরবর্তী নিবন্ধজঙ্গি তৎপরতার নিয়মিত তথ্য চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়