বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। এই সময়ে তামিমের চোখের জল রূপ নিল আনন্দ অশ্রুতে। আগের দিনের কান্নার দৃশ্য গতকাল পরিণত হলো হাসিতে। যে মুখ আগের দিন বারবার লুকানোর চেষ্টা করেছেন মাথায় দেওয়া ক্যাপের আড়ালে সে মুখ থেকে যেন গতকাল হাসিই উদগীরণ হচ্ছিল। যে রাগে, ক্ষোভে, কষ্টে, হতাশা আর বেদনায় কান্না জড়িত কন্ঠে, চোখের জলে বুক ভাসিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন দেশসেরা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল একদিনের ব্যবধানে সে তামিম আবার বললেন তিনি ক্রিকেট ছেড়ে যাচ্ছেন না। তিনি আবার ফিরছেন। আগের দিন বিসিবির কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্র তিনি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তিনি এখন আবার বাংলাদেশ দলের সদস্য। শুধু তাই নয়, এশিয়া কাপ দিয়ে আবার মাঠে নামবেন তামিম সেই অধিনায়ক হিসেবেই। মাঝখানে দেড়মাসের ছুটি নিয়েছেন। আর সে ছুটি বিসিবির কাছ থেকে নয়, নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে।
মূলত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তামিম আবার ক্রিকেটে ফিরেছেন। আগের দিন রাত থেকে প্রচার হতে থাকে তামিমকে ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সে তথ্যের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুসহ যান প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। সাথে ছিলেন তামিমের স্ত্রী আয়েশা খানও। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লম্বা সময় আলোচনার পর অবসরের ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিলেন তামিম ইকবাল। প্রধানমন্ত্রী তাকে খেলায় ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তামিম। আপাতত এক–দেড় মাসের বিরতি নিয়ে এশিয়া কাপ থেকে আবার মাঠে ফিরবেন তিনি।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর বাস ভবন থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে তামিম জানিয়েছেন সিদ্ধান্ত বদলের কথা। তিনি বলেন, আজকে (শুক্রবার) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী আমাকে উনার বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। উনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তে উঠিয়ে নিচ্ছি। কারণ আমি সবাইকে ‘না’ বলতে পারি। কিন্তু দেশের যিনি সবচেয়ে বড় ব্যক্তি, তাকে না বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। এই আয়োজনে পাপন ভাই, মাশরাফি ভাই ছিলেন বিগ বিগ ফ্যাক্টর। মাশরাফি ভাই আমাকে ডেকে এনেছেন। পাপন ভাই সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এক–দেড় মাসের একটা ছুটিও দিয়েছেন। আমার যা চিকিৎসা আছে তা সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। এরমধ্যে যাতে আমি শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট হতে পারি সে কাজটা করতে বলেছেন। এরপর যে খেলাগুলো রয়েছে সেগুলো আমি খেলব।
এশিয়া কাপে অধিনায়ক হিসেবে ফিরবেন নাকি খেলোয়াড় হিসেবে থাকবেন সেই সিদ্ধান্ত এখনও নেননি তামিম। বিরতি থেকে ফেরার পর এই সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তামিম। তামিমের অবসর ভেঙে ফিরে আসায় যেন স্বস্তি খুঁজে পেয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের একটি হোটেলে নাটকীয়ভাবে অবসরের ঘোষণার পর তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না বিসিবি কর্তারা। বিসিবি পরিচালকদের সঙ্গে সভার পর মাঝরাতে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবি সভাপতি জানান, কোনোভাবেই তারা তামিমের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছেন না। বোর্ড প্রধানের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ করেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে। পরে মাশরাফিই তামিম ও তার স্ত্রীকে নিয়ে যান গণভবনে। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে তারা গণভবনে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ একসঙ্গে আলোচনা হয় সবার। পরে ডেকে নেওয়া হয় বিসিবি সভাপতিকে। পরে তামিম ও তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাদা করে ২ ঘণ্টার বেশি সময় কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য স্বস্তির খবরটা এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে।