অবসর ভেঙে খেলায় ফেরার ঘোষণার পর তামিম ইকবালের জন্মস্থান চট্টগ্রামে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছেন তার ভক্তরা।
আজ শুক্রবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে দেশের ওয়ান ডে অধিনায়কের অবসর ভাঙার খবরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে তার ভক্তরা আনন্দ মিছিল শুরু করেন; খুশিতে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা যায় অনেককে।
ছোট ছোট এসব মিছিলের অনেকগুলোর গন্তব্য ছিল তারকা এ ক্রিকেটারের বেড়ে ওঠার স্থান কাজীর দেউড়ির গলি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লম্বা সময় ধরে বৈঠকের পর গণভবন থেকে বেরিয়ে এসে তার আগের দিন বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানান জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে অনেক রেকর্ড গড়া বাম হাতি এ ওপেনার।
এ খবর সংবাদমাধ্যম হয়ে ছড়িয়ে পড়তেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন বয়সী লোকজন আনন্দ আর উল্লাশে ফেটে পড়েন।
জাতীয় পতাকা আর ফুল হাতে অনেকে ছুটে যান কাজীর দেউড়ি এলাকায় তামিমের বাসার সামনে। পরিবারের সদস্যরাও মিষ্টিমুখ করান ভক্তদের। কাজীর দেউড়ি মোড় ও তার বাসার সামনে তারকা এ ক্রিকেটারের নামে স্লোগান দিতে শুরু করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রামের একটি হোটেলে নাটকীয়ভাবে অবসরের ঘোষণা দেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
ক্রিকেট আর তামিমের ভক্তরা হঠাৎ এমন খবরে হতাশ হয়ে পড়েন। এ নিয়ে নানামুখী আলোচনায় তারা ক্ষোভও প্রকাশ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেয়ে যায় তামিমের অবসর নিয়ে আলোচনায়।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে তামিমের অবসর গ্রহণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সন্ধ্যায় অবসরের সিদ্ধান্ত পাল্টানোর ঘোষণা আসার পরপরই ভিন্ন হয়ে যায় পরিবেশ। ক্ষোভের মিছিল রূপ নেয় আনন্দ মিছিলে।
সন্ধ্যায় মিছিলে অংশ নেওয়া আবীর হাসান নামে এক যুবক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “তামিম ইকবালের অবসরের ঘোষণার পর আমরা খুব মানসিকভাবে কষ্ট পেয়েছিলাম। অবসর থেকে সরে আসার ঘোষণা শুনে আমরা খুব আনন্দিত।”
আনন্দ মিছিলে অংশ নেওয়া সবার মুখে ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্তজার প্রশংসা।
তামিমের বাসার সামনে তার চাচাত ভাই আহনাজ খান সাংবাদিকদের জানান, অবসরের ঘোষণার পর থেকে বৃহস্পতিবার সারাদিন বাসায় থাকলেও তামিম অনেক ‘আপসেট’ ছিলেন। পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বললেও এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তবে অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে আসায় পরিবারের সবাই আনন্দিত।
তামিমের প্রতি চট্টগ্রামবাসীর ভালোবাসা আর সমর্থনের বিষয়টিও নিয়ে পরিবারের সদস্যদের কৃতজ্ঞতার কথা জানান তার আরেক চাচাত ভাই আরিয়াস খান।
আচমকা অবসরের কথা জানিয়ে দেওয়ার পর তামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না বিসিবি কর্তারা। বিসিবি পরিচালকদের সঙ্গে সভার পর মাঝরাতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তা জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান।
এরপর শুক্রবার দুপুরের পর পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার মাধ্যমে তামিমকে গণভবনে ডেকে নেন প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন তামিমের স্ত্রী। পরে সেখানে ডেকে নেওয়া হয় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে।
দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমকে তামিম জানিয়ে দেন সিদ্ধান্ত বদলের কথা।
তামিম বলেন, “আজকে দুপুর বেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে উনার বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। উনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তে উঠিয়ে নিচ্ছি কারণ আমি সবাইকে ‘না’ বলতে পারি কিন্তু দেশের যে সবচেয়ে বড় ব্যক্তি, তাকে ‘না’ বলা আমার পক্ষে অসম্ভব।”
তামিম ইকবালের পরিবারের সদস্য এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও বিসিবির সাবেক পরিচালক সিরাজউদ্দিন মো. আলমগীর বলেন, “তামিম খেলায় ফেরার ঘোষণা দেয়ায় পরিবারের সদস্য হিসেবে ও ক্রীড়া জগতের মানুষ হিসেবে আমি খুবই খুশি। আসন্ন বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ একটি ব্যালেন্স টিম কিন্তু হঠাৎ করে তামিমের অবসর ছিল সবার কাছে ‘হতাশাজনক’। তার ফিরে আসাটা বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ মিশন সাকসেসফুল হবে।”
গতকাল বৃহস্পতিবার বাসায় তামিমের সঙ্গে অনেক কথাবার্তা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “মান অভিমানের কারণেই তামিম অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত মান অভিমান সবার থাকবে। সেই কারণে দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, কোনো ভুলবোঝাবুঝির যেন সৃষ্টি না হয়। দল ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের সুনামও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
এদিকে, নিজের শিষ্যের অবসর ভেঙে দলে ফেরার ঘোষণায় উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন চট্টগ্রামে তামিমের ছোট বেলার ক্রিকেট কোচ তপন দত্ত। অবসরের ঘোষণার সময় বাবা ইকবাল খানের সঙ্গে যার নাম ধরে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন তামিম।
তপন দত্ত বলেন, “তামিমের অবসরের ঘোষণা শুনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত বদলের খবরে আনন্দিত।”
তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মাশরাফিকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
তবে ভক্ত ও ক্রিকেটপ্রেমীদের উচ্ছাসের প্রতিফলন তার শিষ্য দেবেন এমনটাই চাওয়া বর্ষীয়ান এ কোচের। তামিমকে আরও চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলার আহ্বান তাঁর।