আফিফ, ইবাদত, তাসকিন, পেছনে তাদের সঙ্গী তামিম ইকবাল। সবার হাস্যোজ্জ্বল এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ইবাদত লিখেছেন, ‘মেনে নেওয়া কঠিন।’ তামিমের অবসরের খবরে অন্য জাতীয় ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়াও প্রায় একই। সবাইকে অবাক করে বৃহস্পতিবার আচমকাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত বিশ্বাস করতে পারছেন না তার জাতীয় দলের সতীর্থরাও। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকে তামিমের সঙ্গে খেলছেন মিরাজ। নিজের ফেইসবুক পাতায় তামিমের কাছ থেকে পাওয়া সব অভিজ্ঞতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। ‘বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি। যিনি ১৫ হাজারের বেশি আন্তর্জাতিক রান করেছেন। খেলা ও জীবন সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে অনেক শিক্ষা পেয়েছি আমি। সবসময়ের সমর্থন, বিশ্বাস ও অনুপ্রেরণার জন্য আপনার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। দারুণ গুণাবলীসম্পন্ন দুর্দান্ত একজন ক্রীড়াবিদ আপনি। ক্রিকেটাররা, সমর্থকরা এবং এই খেলাটি আপনাকে মিস করবে।’ আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রাখার পর থেকে ওপেনিংয়ে তামিমকে সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন লিটন দাস। হৃদয়ভাঙা ইমোটিকন দিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন স্টাইলিশ ওপেনার। ‘আমরা একসঙ্গে ব্যাটিং করেছি। ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করেছি। একসঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি। বিশ্বাসই হচ্ছে না। বাংলাদেশের হয়ে আপনি আর খেলবেন না। আপনাকে অনেক মিস করব ভাই। ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভকামনা।’
গত বছর তামিমের অধিনায়কত্বে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া ইবাদত ঠিক মানতেই পারছেন না এই খবর। তামিমের সঙ্গে পোস্ট করা ছবি দিয়ে বলেন, ‘ছবিটি আমাদের সবশেষ দিনের অনুশীলনের। তামিম ভাই, আপনি আমাদের সঙ্গে হাসছেন। আজকে আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন। আমার জন্য এটি মেনে নেওয়া কঠিন। আপনি খুব ভালো মানুষ। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। বাংলাদেশের জন্য অবদানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা আপনাকে মিস করব।’
পেসার তাসকিন আহমেদ কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি জাতীয় দলে তামিমের অভাব বোধ করবেন জানিয়ে বলেন,‘ মাঠ ও মাঠের বাইরে দীর্ঘ দিনের যাত্রায় একসঙ্গে অনেক মুহূর্ত ও স্মৃতি রয়েছে আপনার সঙ্গে। একজন বড় ভাই ও অধিনায়ক হিসেবে আপনি যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনাকে মিস করব তামিম ভাই।’ বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্বাসই করতে পারছেন না এই খবর। ‘খবরটি শুনে আমি হতবাক। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার কাঁধে আপনার সমর্থনের হাতটা সবসময় মিস করব, তামিম ইকবাল ভাই।’ জাতীয় দলের পেস আক্রমণের আরেক সদস্য শরিফুল ইসলাম যেন ভক্ত হিসেবেই কুর্নিশ করলেন তামিমকে। ‘অনেক ছোট ছিলাম যখন ক্রিকেট খেলাটা বুঝতে শুরু করি, তখনই তামিম ভাইয়ের খেলা দেখতাম অনেক ভালো লাগত। তখন ভাবিনি তামিম ভাইয়ের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য আমার হবে। আমার অভিষেক ম্যাচটাও তামিম ভাইয়ের অধিনায়কত্বে খেলতে পেরেছি। আমি গর্বিত একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটারের সঙ্গে ক্রিকেট খেলায় সুযোগ হয়েছে। অনেক মিস করব আপনাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, তামিম ইকবাল ভাইয়া।’ আরেক পেসার হাসান মাহমুদও ফিরে যান নিজের অভিষেক ম্যাচে। ‘আমি আমার অভিষেক ক্যাপ আপনার কাছ থেকে পেয়েছি এবং এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একজন কিংবদন্তির সঙ্গে খেলতে পারা আমার জন্য সৌভাগ্যের। খবরটি শুনে আমি হতবাক। কখনও ভাবিনি আপনাকে এত তাড়াতাড়ি হারাব আমরা।’ জাতীয় দল থেকে আপাতত বাইরে থাকা সৌম্য সরকার অবশ্য মন খারাপের দলে থাকতে চান না। বরং তামিমের সামনের দিনগুলো রঙিন দেখার আশায় তিনি। ‘বিদায় বলা আমাদের জীবনেরই অংশ। তাই এটি নিয়ে দুঃখ নেই। এর বদলে ভালো স্মৃতিগুলো রোমন্থন করি এবং সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সামনে তাকাই। আপনি আমাদের সঙ্গে অনেক স্মৃতি রেখে যাচ্ছেন। আমরা সবাই আপনাকে মিস করব। নতুন গন্তব্যে আপনার যাত্রা দারুণ হোক। সব কিছুর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।’
ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলোতে তামিমের উদ্বোধনী সঙ্গী ছিলেন ইমরুল কায়েস। দীর্ঘ দিনের সতীর্থের বিদায়ের খবরে দুঃখে ছেয়েছে ইমরুলের মন। ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সত্যিই দুঃখের ও হতাশার খবর। বন্ধু, তোমার নিবেদনের জন্য তোমাকে সম্মান করি। তোমার সঙ্গে অনেক দিন খেলার মতো ভাগ্যবান ছিলাম আমি। তোমার ব্যাটিং উপভোগ করেছি আমি। অনেক কিছু শিখেছি। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা।’ তামিমের এমন বিদায় মানতে পারছেন না জাতীয় দলের একসময়কার নিয়মিত পেসার রুবেল হোসেনও। ‘কান্নাভেজা চোখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন, এভাবে বিদায় জানাবেন কখনও ভাবতে পারিনি। আপনাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। কী বলব ভাই। কিছু বলার ভাষা নাই। শুভকামনা আপনার জন্য সব সময়।’