নগরীর ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকার একটি ভবনের তালাবদ্ধ বাসা থেকে গত শনিবার (১ জুলাই) রাতে কাভার্ডভ্যান চালক আকরাম উল্লাহর (৪৩) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তিনি রোজিনা বেগম রোজী (২৩) নামে এক নারীর সঙ্গে ওই বাসায় থাকতেন। রোজীর স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী।
এ ঘটনায় রোজিনাকে গত সোমবার (৩ জুলাই) খুলনা জেলার ফুলবাড়ি এলাকার বোনের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্টো। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।
এরপর জিজ্ঞাসাবাদে জট খোলে খুনের রহস্যের। পরকীয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে বলে স্বীকার করেছেন রোজিনা।
রোজিনাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে দু’দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা কাভার্ডভ্যান চালক আকরাম উল্লাহ খুনের আদ্যোপান্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
রোজিনা বেগম রোজী, বাগেরহাট জেলার শরনখোলা থানার মালিয়া রাজাপুর এলাকার মোল্লা বাড়ির কবীর মোল্লার স্ত্রী। আকরামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। সেখানে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। আকরাম খুনের ঘটনায় তার ছেলে একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলায় রোজীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তিন দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা বলেন, “গ্রেফতার রোজিনা ও মৃত আকরাম দু’জনেরই আলাদা সংসার আছে। রোজিনার স্বামী সৌদি আরবে থাকায় আকরামের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। আকরাম ও রোজী স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। গত ৩০ জুন বাসাটি ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল আকরামের। তবে গত ১ জুলাই নতুন ভাড়াটিয়া আসার পরও বাসা বুঝিয়ে না দেওয়ায় বাড়ির কেয়ারটেকার প্রতিবেশীদের নিয়ে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেন। গত ৩০ জুন রাতে আকরামকে খুন করার পর রোজিনা সকালে খুলনার বাসের টিকেট কাটেন। তারপর ঘরে থাকা রক্তমাখা ওড়না, তোয়ালে, আকরামের ব্যবহৃত গেঞ্জি কাছের একটি নালায় ফেলে দেন। এরপর রাতে নগরীর অলংকার থেকে খুলনার বাসে উঠে পড়েন।”
তিনি আরও বলেন, “রোজীর মোবাইল ফোনে তার কিছু ব্যক্তিগত ছবি ছিল যেগুলো সে তার সৌদি প্রবাসী স্বামীকে পাঠানোর জন্য তুলেছিল। গত ৩০ জুন রাতে আকরাম ছবিগুলো দেখে জোর করে রোজীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় অস্বীকৃতি জানান। এ সময় আকরাম তাদের সম্পর্কের কথা রোজীর স্বামীকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এ নিয়ে দুইজনের কথা কাটাকাটিতে আকরামের অণ্ডকোষ চেপে ধরেন রোজিনা। এ সময় আকরামের নাক দিয়ে রক্ত চলে আসে। শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়ায় আকরামকে গলায় রশি বেঁধে বাসার ছোট্ট ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে রোজিনা। না পেরে মরদেহটি খাটের নিচে রেখে দেয়।”
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই মেট্রোর পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ বলেন, “রোজিনার সঙ্গে কবির মোল্লার ২০১৫ সালে বিয়ে হয়। তাদের ৫ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। রোজিনা নগরীর একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তার স্বামীর নগরীর ইপিজেড থানার লেবার কলোনিতে চায়ের দোকান ছিল। দোকানে আকরামের সঙ্গে রোজিনার পরিচয়। করোনাকালীন সময়ে রোজিনার চাকরি চলে গেলে স্বামী ও সন্তানসহ গ্রামে চলে যায়। স্বামী গ্রামে কোনো কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে সৌদি আরব চলে যায়। রোজিনা তার মেয়েকে বড় বোনের কাছে রেখে ২০২২ সালের রমজান মাসের আগে নগরীর কলসীদিঘীর পাড় এলাকায় তার ভাই মিজানের বাসায় উঠেন। পুনরায় পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। দেড় মাস পর রোজিনা নিজে বাসা ভাড়া নেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে নিচে চায়ের দোকানে আকরামের সঙ্গে তার দেখা ও কথাবার্তা হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়৷ ২০২৩ সালের নগরীর বন্দরটিলার টিইসি ভবনের পিছনে একটি পাঁচতলা ভবনের নিচ তলায় রুম ভাড়া নেন তারা। রোজিনার স্বামীর সঙ্গে মাঝেমধ্যে বিদেশ থেকে ইমোতে কথা হতো।”
তিনি আরও বলেন, “কাভার্ডভ্যান চালক আকরাম উল্লাহ হত্যা মামলায় জড়িত রোজিনা বেগমকে গত ৩ জুলাই খুলনা নগরীর বোনের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৪ জুলাই রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে হাজির করা হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। আকরামকে হত্যার কথা স্বীকার করে আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রোজিনা। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।”