যে চার কারণে হালদায় ডিম ছাড়ায় বিলম্ব

হাটহাজারী প্রতিনিধি | বুধবার , ৫ জুলাই, ২০২৩ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

পানির তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটি এবং পানিতে দ্রবীভূত মোট কঠিন পদার্থের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণে এবার হালদায় মা মাছ দেরিতে ডিম ছেড়েছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। এসব গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারের এমন হেরফেরের জন্য জলবায়ুর ব্যাপক নেতিবাচক পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন তারা।

হালদা মিঠাপানির মেজরকার্প জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল এবং কালিবাউশ) একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র। সাধারণত অনুকূল পরিবেশ পেলে এপ্রিল থেকে জুন মাসের ছয়টি জোয়ের মাধ্যমে নদীতে ডিম ছাড়ে মা মাছ। কিন্তু এবার পরপর পাঁচটি জো নিষ্ফলা হওয়ার পর সর্বশেষ ১৮ জুন ষষ্ঠ জো মধ্যরাতে আমতুয়া পয়েন্টে মা মাছ ডিম ছাড়ে। এরপর জোয়ার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নাপিতের ঘাট, আজিমার ঘাট, মাছুয়াঘোনা হ্যাচারি সংলগ্ন পোড়াকপালী স্লুইচ গেট, গড়দুয়ারা নোয়াহাটসহ হালদার বিভিন্ন স্পনিং গ্রাউন্ডে এই ডিম ছড়িয়ে পড়ে। পরে বজ্রপাতসহ ব্যাপক বৃষ্টির প্রভাবে হালদায় পাহাড়ি ঢল নেমে এসে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই এক জোতেই এ বছর হালদা নদী থেকে রেকর্ডভাঙা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে ডিম সংগ্রহকারীসহ হালদা সংশ্লিষ্ট সবার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছে। হালদা গবেষক ড. শফিকুল ইসলাম জানান, এবার জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বায়ুর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। এর প্রভাবে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (২০৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তুলনায় বেড়ে সর্বোচ্চ ৩৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, লবণাক্ততা সর্বোচ্চ ২ পিপিটি (স্বাভাবিক মান ০.৫ পিপিটি বা তার কম), টিডিএসের (মোট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থ) মান আদর্শ মানের (১০০০ পিপিএম) তুলনায় বেড়ে সর্বোচ্চ ২০০০ পিপিএম এবং ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটির (তড়িৎ পরিবাহিকতা) মান স্বাভাবিকের (৩৫০ মাইক্রো সিমেন্স/সেমি.) তুলনায় বেড়ে সর্বোচ্চ ৪০০০ মাইক্রো সিমেন্স/সেমি. ইত্যাদি প্যারামিটারের মান আদর্শ মানের তুলনায় অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

তিনি বলেন, হালদায় বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জলজ জীবনের জন্য আরো উন্নত ও নিরাপদ করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড যেমন শিল্প কলকারখানার বর্জ্য দূষণ, পোল্ট্রি বর্জ্য, হালদা ও শাখা খালে ভরাট অংশের বালু উত্তোলন, ভূজপুর ও হারুয়ালছড়ি স্লুইচ গেট নিয়ন্ত্রণ বা অপসারণ, সরাসরি নদীতে বর্জ্য নিক্ষেপ, জাল, বড়শি ও বিষ দিয়ে মাছ মারা বন্ধ, কৃষি জমিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে অধিক জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করা, চরকাটা ও অবৈধ বালি উত্তোলন ইত্যাদি বন্ধে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য হালদা নদীর উপর একাডেমিক ডিগ্রি সম্পন্ন ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গবেষক দল গঠন করা অত্যন্ত জরুরি বলেও মত প্রকাশ করেন এই হালদা গবেষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীর শাহ মিরপুরে ড. নুর হোসাইন সড়ক উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র ও পাঠাগার উদ্বোধন