বান্দরবানে তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তৎপরতায় আতঙ্কে ঈদের টানা ছুটিতেও পর্যটকদের বাড়তি চাপ ছিল না। তবে প্রকৃতির নির্মল ছোয়ায় পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলাগুলোর স্থানীয় দর্শনার্থীদের।
গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, বৌদ্ধ মন্দিরে ভিড় জমিয়েছিল ভ্রমণপিপাসুরা।
তবে পর্যটনের ভরা মৌসুমেও আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট এবং গেস্টহাউজগুলোতে আশানুরুপ রুম বুকিং না হওয়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা।
পর্যটক না থাকায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে রেস্টুরেন্ট ও ট্যুরিস্ট পরিবহন মালিক শ্রমিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হচ্ছে বান্দরবান। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ জেলায় পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চোখ জুড়ানো সব সৌন্দর্য। এখানের পাহাড়ের প্রকতি এবং শৈল্পিক ছোয়ায় সাজানো দর্শনীয় স্থান নীলাচল, মেঘলা, বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি, নীলদিগন্ত, শৈলপ্রপাত ঝর্না, রুপালী ঝর্না, মুরুং ঝর্ণা, বৌদ্ধ মন্দির, স্বর্ণ মন্দির, রামজাদী স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে পর্যটকদের।
পর্যটকরা কখনো লেকের পানিতে প্যাডেল বোটে, কখনো ক্যাবল কারে এবং কখনো নীলাচলের রোমাঞ্চকর দোলনায় প্যারাসেইলিংয় আকাশে ওড়ার স্বাদ নিচ্ছেন। তবে যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে নিরাপত্তা বিবোচনায় রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় দুর্গমাঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণে যেতে পারছে না পর্যটকরা।
রুমা, রোয়াংছড়ি এবং থানচি তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তৎপরতায় আতঙ্কে ঈদের টানা ছুটিতেও পর্যটকদের বাড়তি চাপ ছিল না এবারের ঈদের ছুটিতে। তারপরও প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়ায় পর্যটন স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলাগুলোর স্থানীয় দর্শনার্থীদের।
বেড়াতে আসা পর্যটক চট্টগ্রামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আজব খান ও প্রফেসর ড. মনোজ বড়ুয়া বলেন, এখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঈর্ষনীয়। যেদিকে থাকাই চোখ জুড়ানো সব সৌন্দর্য মুগ্ধ হওয়ার মতো। ঈদের ছুটিতে যে রকম ভিড় থাকার কথা ছিল তেমনটি নেই বান্দরবানে।একদিকে ভালো লাগছে প্রকৃতির নির্জনতা উপভোগ করা যাচ্ছে, অন্যদিকে খারাপও লাগছে পর্যটকদের উপস্থিতি কম দেখে। নিরাপত্তাগত সংশয়ে পর্যটক কম তবে এখানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক। কোনো ঝুঁকি ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে পারছে পর্যটকরা।
ঢাকার পর্যটক শামিমা, নীর্জনা, রেশমি বলেন, মেঘলা আকাশ এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ভ্রমণটি আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। মনে হচ্ছে বান্দরবানের প্রকৃতি আমাদের সাপোর্ট করছে ঘুরে বেড়াতে। গরমের তীব্রতা নেই, চারদিকে সবুজের সমারোহ অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে মনে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভালো এখানের। বর্ষায় পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে বান্দরবান ভ্রমণের বিকল্প নেই।
বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েক দিনের টানা ছুটিতেও আশানুরুপ রুম বুকিং হয়নি আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে। রুম বুকিংয়ে ছাড় ঘোষণার পরও পর্যটক না আসায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের তৎপরতায় আতঙ্কে পর্যটকের আগমন কমে গেছে জেলায়। এতে চরমভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
এদিকে, ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তা, আরামদায়ক আনন্দময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজি বলেন, “পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় বান্দরবানে নতুন নতুন দর্শনীয় পর্যটন স্পট খুঁজে বের করা হচ্ছে। পুরনো স্পটগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে সংযোজন করা হচ্ছে নতুন নতুন বিনোদন মাধ্যম। পাহাড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিরাপত্তা বিবেচনায় রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি এ তিনটি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। সেগুলো ছাড়া অন্য সবগুলো স্পটে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াতে পারছেন।”