ভারতীয় মুসলমানদের অধিকার নিয়ে ওবামার মন্তব্যে ক্ষেপেছে বিজেপি

| মঙ্গলবার , ২৭ জুন, ২০২৩ at ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত সপ্তাহে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষা না হলে ভারতে একদিন ‘ভাঙন দেখা দিতে পারে’। যে সময়ে ওবামা এই মন্তব্য করেন, সে সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। ওবামার এ মন্তব্য যে মোদীকে অসন্তুষ্ট করছে তা তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাদের বাক্যবাণেই স্পষ্ট। যদিও মোদী বরাবরের মত চুপ করেই আছেন। খবর বিডিনিউজের।

গত ২১ জুন রওয়ানা হয়ে ২৪ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন মোদী। বর্তমানে তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে মিশরে রয়েছেন। তিন দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে মোদী ইউএস কংগ্রেসে একটি যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য দেন। কংগ্রেসে মোদীর বক্তব্যের ঠিক আগে সিএনএন ওবামার ওই সাক্ষাৎকার প্রচার করে। যেখানে সিএনএন এর সাংবাদিক তথাকথিত ‘সংকীর্ণ গণতন্ত্রবাদীরা’ ‘প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য কতটা হুমকি’ তা উল্লেখ করে তারপর মোদীকে নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করেন।

প্রশ্নউত্তরের এক পর্যায়ে ওবামা বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন তবে সেখানে হিন্দু সংখ্যাগুরুর দেশ ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকারের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা হওয়া উচিত। যদি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে আমার আলোচনা হত, যাকে আমি খুব ভাল করে চিনি। তবে তার সঙ্গে আমার বিতর্কের একটি অংশ হত, যদি আপনি ভারতীয় অদিবাসী সংখ্যালঘুদের অধিকারের সুরক্ষা না করেন, তবে এক সময় ভারতে ভাঙন শুরু হয়ে যাওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। যা ভারতের স্বার্থের বিপরীতেও যাবে বলে মন্তব্য করেন ওবামা। ওবামা যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ওই সময়ে মোদীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। ওবামার এই মন্তব্যে ‘বিস্মিত’ হয়েছেন বলে গত রোববার সাংবাদিকদের বলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামান।

তিনি বলেন, যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী যুক্তরাষ্ট্রে প্রচার চালাচ্ছেনএখানে প্রচার বলতে আমি ভারত সম্পর্কে কথা বলা বোঝাচ্ছি। তখন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ভারতীয় মুসলমানদের নিয়ে কথা বলছেন। আমি বলতে চাই, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। কিন্তু সেখানে আমাদের ভারতে ধর্মীয় সহনশীলতা নিয়েও কথা শুনতে হচ্ছে। অথচ, বারাক ওবামা ক্ষমতায় থাকার সময় সিরিয়া ও ইয়েমেনের মত মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বোমাবর্ষণ করেছে। গতকাল সোমবার ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও ওবামার ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ভারত কখনও ধর্মের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে বৈষম্য করে না। মানুষের উচিত ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বোঝার চেষ্টা করা। তিনি এও বলেন, ভারতের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে মন্তব্য করা ব্যক্তিদের এও ভাবা উচিত যে, তারা কতগুলো মুসলিম দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে। ওবামার মন্তব্য নিয়ে প্রথম আক্রমণ করেছিলেন বিজেপিশাসিত আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তারও অবশ্য একটি গল্প আছে। ওবামার সাক্ষাৎকার প্রচার হওয়ার পর ভারতীয় সাংবাদিক রোহিণী সিং টুইট করে জানতে চেয়েছিলেন, অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে গুয়াহাটিতে ওবামার বিরুদ্ধে কী কোনো এফআইআর দায়ের করা হয়েছে? ওবামাকে কোনো ফ্লাইট থেকে নামিয়ে গ্রেপ্তার করতে আসাম পুলিশ কি ওয়াশিংটন রওয়ানা হয়েছে? তার জবাবে সময় নষ্ট না করে গত ২৩ জুন হিমন্ত বিশ্বশর্মা টুইট করে বলেন, ভারতে বহু হুসেইন ওবামা রয়েছে। ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে তাদের ব্যবস্থা করাই প্রথম কাজ। আসাম পুলিশ সেই অগ্রাধিকারকেই গুরুত্ব দেবে। বিজেপি নেতাদের এসব বক্তব্যের বিরুদ্ধে আবার সরব হয়েছেন ভারতের বিরোধী দলের নেতারা। ওবামা বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের পাল্টায় কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্থিতি ফেরাতে চায় রাশিয়া, পুতিনের ক্ষমতায় চিড় দেখছে পশ্চিমারা
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ ও কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের সুবিধাভোগীদের সাথে মতবিনিময়