সামপ্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকদের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে : নওফেল

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২১ জুন, ২০২৩ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সামপ্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও ধর্মীয় গোঁড়ামি প্রতিরোধে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় নেতাদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। সামপ্রদায়িক হামলা উস্কে দিতে গুজব সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে। অনেক সময় ধর্মীয় উৎসবে অহেতুক উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়, যার সঙ্গে ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক থাকে না। উৎসবে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বশীল আচরণের ব্যাপারেও আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর নিতাই আশ্রম সম্মুখে ডিসি হিল প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) চট্টগ্রাম আয়োজিত ২৬তম কেন্দ্রীয় রথযাত্রার ধর্মীয় মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে গিয়ে আমরা যে রাজনৈতিক যুদ্ধে রয়েছি, এই যুদ্ধ অত্যন্ত কঠিন। এই যুদ্ধে জয়ী হতে হলে সমাজে যারা সামপ্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক, তাদের শিকড় যতই গভীরে থাকুক না কেন, সেটির মূল উপড়ে ফেলতে হবে। মন্দিরের জায়গা দখল করবেন সাধু সন্ন্যাসীদের নামে মামলা হামলা করবেন এটা আমরা কোনো ভাবেই বরদাস্ত করবো না। সামপ্রদায়িকতা, ধর্মীয় উগ্রবাদ, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে বারবার বাধা সৃষ্টি করছে। জামায়াতবিএনপির মতো উগ্র সামপ্রদায়িক দলগুলোর অবস্থান অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে এখনো বড় বাধা। নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ পন্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে ও তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় উদ্বোধক ছিলেন সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়।

আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, জনগণ যার যার ধর্ম পালন করবে। অন্যের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এই দেশের সামপ্রদায়িক শক্তিকে যারা পৃষ্টপোষকতা করবে তাদেরকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করা হবে। এই দেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ। এই দেশে সামপ্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশ পরিচালিত হবে। আজ সেই আদর্শ হচ্ছে ধর্মে ধর্মে কোন হানাহানি থাকবে না। দেশের সকল নাগরিক সমান অধিকার পাবে। যারা সামপ্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রথযাত্রায় মহান আশির্বাদক ছিলেন ইসকনের হেডকোয়ার্টার ভারতের মায়াপুর হতে আগত ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ, বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর সেন, মহানগর হিন্দুবৌদ্ধখ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশিষ ভট্টাচার্য, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাবেক কাউন্সিলর বিজয় কিষান চৌধুরী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, জন্মাষ্টমী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ, মহানগর যুবলীগের সহ সভাপতি দেবাশীষ পাল দেবু, মহিলা কাউন্সিলর নিলু নাগ, মহিলা কাউন্সিলর রুমকী সেনগুপ্ত।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ইসকন মোহরা মন্দির অধ্যক্ষ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, নন্দনকানন ইসকন মন্দিরের সহ সভাপতি অকিঞ্চন গৌর দাস ব্রহ্মচারী, যুগ্ম সম্পাদক মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, সুবল সখা দাস ব্রহ্মচারী, অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী প্রমুখ। ঐতিহ্যবাহী মহাশোভাযাত্রা নন্দনকাননস্থ শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির সম্মুখে ডিসি হিল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রমে এসে শেষ হয়। আজ ২১ জুন থেকে ৭ দিনব্যাপী জে এম সেন হলে ভাগবদ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হবে। ভাগবতম কথা পরিবেশন করবে ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ। উল্লেখ্য যে, ২৮ জুন উল্টো রথযাত্রা নন্দনকানন গৌর নিতাই আশ্রম থেকে শুরু করে উল্টো পথে নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দিরে এসে শেষ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবিতে সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করবে প্রশাসন
পরবর্তী নিবন্ধবর্ণিল আয়োজনে নগরীতে রথযাত্রা উৎসব