মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, গত কয়েকদিন যাবৎ স্বাধীনতা বিরোধীদের যে আস্ফালন দৌরাত্ম্য, তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের আশকারায় হচ্ছে, সেটা জাতির জন্য অশনিসংকেত। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম এম.এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারে আয়োজিত বিভাগীয় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, সারাদেশে বধ্যভূমি সংরক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকার পরে মুক্তিযুদ্ধের সুঁতিকাগার চট্টগ্রাম। এখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের বিষয়ে সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। পাহাড়তলী বধ্যভূমিসহ যে সকল বধ্যভূমি রয়েছে সেগুলোর সংরক্ষণ কাজ দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করা হবে। বিএনপির ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শেষে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা জামালখানে ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দেয়ালে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সুঁতিকাগার বীর চট্টলার মাটিতে ঘৃণ্য অপরাধ করেছে স্বাধীনতা বিরোধীরা। তারা শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নয়, জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার মতো স্পর্ধা দেখিয়েছে। তারা জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙার মধ্যদিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বাঙালি জাতির হৃদয় ভেঙেছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই। তাদের শাস্তি দাবি করছি।
সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের উদ্বোধক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে আসছে। অনেকেই ইতিহাস বিকৃত করে অনেক কথা বলছেন। বঙ্গবন্ধুর নামটাও মুছে ফেলার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। আমরা অনেক দৃশ্য দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দৃশ্য কোনো দিন ভুলতে পারবো না। ১৫ আগস্টের কথা কোনো দিন ভুলবো না। কী অপরাধ করেছিলো বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা? এসব কিছুর আজকে হিসাব নিকাশের সময় এসেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের জিয়া জাদুঘরের স্থানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রূপান্তর করা হবে। এই ব্যাপারে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এখানে আমরা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করবো। এটা মুক্তিযোদ্ধাসহ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি।
সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা শুরু হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি সরকার উৎখাতের চক্রান্ত শুরু করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল। তখন বিএনপির জন্ম হয়নি। গত বুধবার চট্টগ্রামে বিএনপির কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করেছে। জামালখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুরের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। এর প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে ২১ জুন দেশের সব জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ও ইউএনও কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি।
সমাবেশে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলা থেকে আগত প্রায় ৫ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.কে.এম সরোয়ার কামাল দুলু ও মহানগরের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান বীর বিক্রম, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, যুগ্ম সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম সুলতান আহমেদ ও ঢাকা মহানগর সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মোল্লা।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, খাগড়াছড়ি জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন, ফেনী জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতালেব, কুমিল্লা জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আলম বাবুল, নোয়াখালী জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক মিলন, বিএলএফ কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন রাশেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নূর উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সরোয়ার আলম চৌধুরী মনি প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আন্দোলন–সংগ্রামে বিভিন্ন অবদানের জন্য সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপি।