রাজনৈতিক সংঘাত কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না

| শনিবার , ১৭ জুন, ২০২৩ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

একটা নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে যে, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই আমাদের রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়। কোথাও কোথাও সংঘাত তৈরির আশংকা সৃষ্টি হয়। ঠিক সেভাবে এখন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। শুরু হয়েছে সভাসমাবেশের আয়োজনের প্রতিযোগিতা। চট্টগ্রামে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে যাওয়ার পথে জামালখান মোড়ে বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র ভাঙচুরের ঘটনা সংঘাত পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৫ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, নগরীর জামালখান মোড়ে দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মমুখর জীবনের ইতিহাস। ৫০টি ট্যাম্পার্ড গ্লাসে তুলে ধরা হয়েছিল এই ইতিহাস। চোখের পলকেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো এসব ট্যাম্পার্ড গ্লাস। গত বুধবার বিকেল ৪টার দিকে নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় বিএনপি আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে যাওয়ার পথে যুবদলের একটি মিছিল থেকে এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে একই মিছিল থেকে আসকার দীঘি সংলগ্ন আঞ্চলিক লোক প্রশাসন কেন্দ্রের কাচের নামফলক, সিসি ক্যামেরা ও মানবতার দেয়াল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচ যুবদল কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বুধবার বিকেলে এই ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জামালখান ও বাকলিয়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, জামালখান এলাকার আইডিয়াল স্কুলের পর থেকে ‘মুজিব মানে বাংলাদেশ’ নামে দেওয়ালে সাঁটানো বঙ্গবন্ধুর সব দেয়াল চিত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। শেখ রাসেল পাঠাগার পর্যন্ত এ ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া দেয়াল থেকে তুলে নিয়ে ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। ওয়াকওয়ে জুড়ে পড়ে ছিল ভাঙা কাচ ও বঙ্গবন্ধুর ছবি। সড়কের ডিভাইডারে লাগানো আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার একটি ম্যুরালও ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়েছে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঘটনার সময় পাশের সেন্ট মেরিস স্কুল ছুটি হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় রাস্তায় যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

আমরা স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছি যে, সংঘাতের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। নেতাদের মাঠ গরম করা বক্তৃতাবিবৃতিতে কর্মীদের মধ্যেও নানা ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিক্রিয়ায় রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনৈতিক দলের রাজপথে ফায়সালা কিংবা রাজপথ দখল করার হুমকিধমকি কোনোভাবে কাম্য নয়। বর্তমানে দেশ এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি কিংবা অন্য কোনো দলের অস্থির পরিস্থিতি তৈরি করা মোটেও ঠিক হবে না।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংঘাতময় পরিস্থিতির যে আশংকা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে তৈরির পটভূমি চলছে তা জাতীয় অগ্রযাত্রা সংবিধানের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য জটিলতর হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতারা। তাই এই বিষয়টি এখনই বিবেচনায় নিয়ে অনিবার্য সংঘাত এড়ানোর পথে হাঁটার জন্য সকল রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আশা প্রকাশ করেন তারা।

বলা বাহুল্য, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে অসহিষ্ণু মনোভাব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরেও উদ্বেগউৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিভিন্ন মহলেও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমনিতেই অর্থনীতি ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনা ঘটলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করতে হবে। যদি দেশে সত্যি সত্যি কোনো সংঘাত দেখা দেয়, বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নেবে। আগে যেমন আমরা সস্তায় পণ্য সরবরাহ করতে পারতাম। এখন ভারত ও পাকিস্তানও সেটি করছে। অনেক ক্রেতা সেখানে চলে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, রাজনৈতিক সংঘাত হলে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ আরও কমে যাবে। ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। বেকারত্ব বাড়বে। অতীতেও রাজনীতিকেরা ব্যবসায়ীদের কথা শোনেননি। এবারও শুনবেন বলে মনে হয় না। তবে আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলতে পারি। রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমস্যা সমাধানে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। ব্যবসাবাণিজ্য সুরক্ষার পাশাপাশি নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। সংঘাত এড়াতে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করা উচিত তাদের। দীর্ঘ একদশক প্রায় রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশের কারণে দেশের যে অদম্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা যেন কোনোভাবেই বিঘ্ন না ঘটে সেই দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে