দশ বছর বয়সী তামিম। বন্ধুদের নিয়ে সারাক্ষণ দুরন্তপনায় মেতে থাকতো। একদিন তার মা খেয়াল করলেন তামিম কিছুদূর হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছে। হাত দিয়েও কিছু ধরতে পারছে না। ধীরে ধীরে হাত–পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। তামিমকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান, তামিমের ‘গুলেন বারি সিন্ড্রম’ নামক এক ধরনের স্নায়ু রোগ হয়েছে।
হাসপাতালে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে ফিজিওথেরাপি নিতে বলেন। শহরে থেকে দীর্ঘমেয়াদী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় অনেকটা দুঃশ্চিন্তায় পড়েন তামিমের বাবা–মা। তবে প্রতিবেশী এক ইউনিয়ন সমাজকর্মীর মাধ্যমে রাঙ্গুনিয়া প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কথা জানতে পারেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত এ কেন্দ্রে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
পরে তামিমকে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে নিলে সেখানকার কনসালট্যান্ট (ফিজিওথেরাপি) ও ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট মিলে তার এসেসমেন্ট করেন। তার পেশি শক্তির গ্রেডিংয়ের ওপর ভিত্তি করে ট্রিটমেন্ট প্লান তৈরি করেন। সেভাবেই তার চিকিৎসা চলতে থাকে। ধীরে ধীরে সে সুস্থ হতে শুরু করে।
শুধু তামিমই নয়, সব বয়সী প্রতিবন্ধীরা সেবা পাচ্ছেন রাঙ্গুনিয়ার প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে। চট্টগ্রাম জেলায় স্থাপিত দুটি কেন্দ্রের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদরের ইছাখালী নূর জাহান কমিউনিটি সেন্টারের নিচতলায় একটি অবস্থিত। অন্যটি নগরের হালিশহরে।সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গুনিয়া ছাড়াও পাশের উপজেলা রাউজান, বোয়ালখালী, রাঙামাটি পার্বত্য এলাকা থেকেও এসেছেন প্রতিবন্ধী রোগীরা। দায়িত্বরতরা জানালেন, শুধু আশপাশের উপজেলা নয়, এমনকি পার্বত্য অঞ্চলের কাপ্তাই, বেতবুনিয়া, রাজস্থলী থেকেও এখানে রোগী আসেন। সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এখানে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এই কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা আমিনুল হক বলেন, হঠাৎ স্ট্রোক করে শরীরের বাম পাশ অবশ হয়ে যায় এবং কথা বলতেও অসুবিধা হয়। পরে প্রতিবন্ধী হাসপাতালে এসে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ এন্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি নিয়ে অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছি।
আমেনা আক্তার নামে রোগীর এক স্বজন বলেন, আমার বাড়ি ইছাখালী। আমার শিশুর প্রতিবন্ধী সমস্যা নিয়ে এখানে এসেছি। এখানকার সেবার মান খুবই ভাল। কোন টাকা–পয়সা নেয়া হয় না। শুধুমাত্র ভর্তির সময় জাতীয় পরিচয় পত্র ও একটি ছবি নিয়েছিল। এখানে এসে ডাক্তারদের ব্যবহারও অনেক ভালো।
কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার পাশাপাশি বিনামূল্যে সহায়ক উপকরণ হুইল চেয়ার, ট্রাইসাইকেল, সাদাছড়ি, হিয়ারিং এইড, ক্রাচ, স্ট্যান্ডিং ফ্রেম, ওয়াকিং ফ্রেম, কর্নার চেয়ারসহ বিভিন্ন উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কেন্দ্রের চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট ফিজিওথেরাপি) এস এম নোমান বলেন, ভালো সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। রোগী আর স্বজনদের মুখে হাসি দেখলে আমাদেরও ভালো লাগে।
প্রতিবন্ধী বিষয় কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিদিন ৮০–১০০ জন রোগী আসে যারা গড়ে ১০০টি সেবা নিয়ে থাকেন। এই কেন্দ্রে স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, ফ্রোজেন সোল্ডার, জিবিএস, এনকাইলোজিং স্পন্ডালাইটিস, অকুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি, মোবাইল থেরাপিভ্যান সার্ভিস, বাত–ব্যথা (কোমর/মাজা–ঘাড়–মেরুদণ্ডে বা হাঁটুতে), স্পন্ডালাইটিস, আর্থ্রাইটিস (অস্টিও/রিমাটয়েড), স্পোর্টস ও আঘাতজনিত সমস্যা, সেরিব্রালপলসি ও প্রতিবন্ধিতা, কাউন্সিলিং ও প্রশিক্ষণ সুবিধা দেয়া হয়।