চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ‘বি১’ উপ–ইউনিটে আসন খালি থেকে যাওয়ার আশঙ্ক্ষায় পাস নম্বর কমিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পাস নম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৩ এবং কোটায় পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৫ থেকে কমিয়ে ২৮ করা হয়েছে। গত ২৫ মে ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়। এতে নতুন করে পাস করেছেন ১৭৭ জন শিক্ষার্থী। এর আগে গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত হয় ‘বি১’ উপ–ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্যরা।
জানা যায়, পূর্ব নির্ধারিত নম্বর পেয়ে পাসের হার কম দেখে গত ২৫ মে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় পাস নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। অনুষদের ডিন ও ভর্তি পরীক্ষার বি–ইউনিটের কো–অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে এ সভায় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সভাপতি এবং পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। পাস নম্বর কমানোর পাশাপাশি বিষয়টি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির পরবর্তী সভায় রিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র মতে, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত বি১ উপ–ইউনিটে ১ হাজার ৩৮২ জন আবেদন করে পরীক্ষায় ৯১৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে পাস করেন মাত্র ১৫২ জন। বি–১ উপ–ইউনিটের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ৬০, নাট্যকলা বিভাগে ৩৫ এবং সংগীত বিভাগে ৩০টি আসনসহ মোট ১২৫টি আসন রয়েছে। সেখানে মাত্র ১৫২ জন পাস করায় সবগুলো আসন পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। এর আগেও আসন খালি থাকতে দেখা গেছে। পূর্বের নিয়মে পাস করেছে ১৫২ জন। পাস নম্বর কমানোর পর সাধারণ আসনে পাসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৬ এবং কোটায় পাস করেছে ৫৩ জন। সংশোধিত ফলাফলে সর্বমোট ৩২৯ জন মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে। যার ফলে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করলেও উপাচার্যের বিশেষ বিবেচনায় পাস করেছেন ১৭৭ জন। পাশাপাশি সংশোধিত (পাস নম্বর কমিয়ে আনা) ফলাফলে পাসের হার বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এ নিয়ে গত সোমবার অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় নম্বর কমিয়ে পাসের হার বাড়ানোর বিষয়টি রিপোর্ট করা হলে কোর কমিটি সেটির ব্যাপারে দ্বিমত করেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ ছিলেন ডিনরা। ভর্তি কমিটির সদস্য ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. রাশেদ মোস্তফা আজাদীকে বলেন, এ বিষয়টি কোর কমিটির মূল এজেন্ডায় ছিল না। বিবিধে ছিল। পরে সেটি কলা অনুষদের ডিন পেশ করেছেন। এটি নিয়ে কেউ দ্বিমত না করলেও এ ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। উপাচার্য চাইলে ডিনদের সঙ্গে আলোচনা করে এটি করতে পারতেন। তিনি নিজে এটি জানাতে পারতেন। তাহলে সুন্দর হতো।
তবে এক্ষেত্রে উপাচার্য যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেননি বলে অভিযোগ করে ভর্তি কমিটির আরেক সদস্য ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর হেলাল উদ্দিন নিজামী আজাদীকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শর্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে পরিবর্তন করা যায়। এটি নতুন কিছু নয়। জরুরি পরিস্থিতিতে নির্ধারিত পর্ষদ (ডিনস কমিটি) সিদ্ধান্তের জন্যে বসতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এই বিষয়ে উপাচার্যকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার। তবে উপাচার্যকে কালক্ষেপন না করে গৃহীত সিদ্ধান্ত ওই পর্ষদকে (ডিনস কমিটি) তার বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি কোন পরিস্থিতিতে নিতে হয়েছিল তা উপস্থাপন করতে হবে। এটি এই জন্যেই যাতে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে জনমনে কোনো সংশয় না থাকে। এই ক্ষেত্রে তিনি তা অনুসরণ করেননি এখন পর্যন্ত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তিনি আইনের পরিপূর্ণ প্রতিপালনে আগ্রহী নন।
এ বিষয়ে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ও ভর্তি পরীক্ষার বি–ইউনিটের কো–অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, বি১ উপ–ইউনিটে ১২৫টি আসনের বিপরীতে পাস করেছিল ১৫২ জন। পাস করা শিক্ষার্থীদের অনেকে অন্য ইউনিট বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পরীক্ষা দিয়েছেন সেখানেও ভর্তি হতে পারেন। যার ফলে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ধারণা করছি ওই উপ–ইউনিটের বিভাগগুলোর অর্ধেক আসন ফাঁকা থেকে যেতে পারে। তাই আমরা পাসের হার কিছুটা বাড়ানোর জন্য বি ইউনিট এবং বি–১ উপ–ইউনিটের কমিটির সকল সদস্যদের সঙ্গে বসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে উপাচার্যের কাছে সুপারিশ করা হলে তিনি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ফলাফল সংশোধনের অনুমতি দেন।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ অ্যাক্ট ১৩ (সি) ধারা অনুযায়ী উপাচার্যকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেই ক্ষমতাবলে তিনি এ অনুমতি দিতে পারেন। তাছাড়া এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে, বিষয়গুলো এভাবেই সমাধান করা হয়েছে।