ঐতিহ্যের ছোয়াঁয় অনন্য ত্রিপুরার হেরিটেজ পার্ক। ত্রিপুরা ১.১ কিমি এলাকা জুড়ে ১২ একর জমির উপর এটি নির্মিত। উদ্যানের প্রবেশদ্বারটি শৈল্পিক অংশ যা ত্রিপুরার ইতিহাসের উপজাতীয় এবং অ–উপজাতি উভয় বিভাগের শিল্প ও সংস্কৃতিকে সুরেলাভাবে মিশ্রিত করে শিল্প কাঠামোর একটি অনন্য ভাস্কর্য উপস্থাপন করা হয়েছে। উক্ত পার্ককে তিনটি অংশে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে প্রথম ভাগে দ্য মিনি ত্রিপুরা, দ্বিতীয় ভাগে দ্য ন্যাচারাল ফরেস্ট এবং তৃতীয় ভাগে দ্য মেডিসিনাল প্যান্ট টেবিল টপ। এছাড়াও, এটিতে একটি সুন্দর বাগান রয়েছে যা সেরা ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইনারদের দ্বারা ম্যানিকিউর করা এবং ভাস্কর্য করা হয়েছে।
ত্রিপুরা রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী ও দর্শনীয় সকল স্থাপনাগুলোর মিনিয়েচার করে রাখা হয়েছে। আগরতলা শহর থেকে মাত্র ১৫ মিনিটের দূরত্ব হেরিটেজ পার্কের। মাত্র ১০ রুপি দিয়ে প্রবেশ করেই উপভোগ করা যাবে সবুজে ঘেরা ছায়া–সুনিবিড় আর হেরিটেজ পার্কের অপরূপ সৌন্দর্য। মিনি ত্রিপুরা অংশে রয়েছে ত্রিপুরা রাজ্যের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় সব স্থাপনার মিনিয়েচার। আকার–আকৃতিতে ছোট হলেও দেখতে একেবারেই আসলের মতো।
এই মিনিয়েচার কিংবা ক্ষুদ্র সংস্করণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী উজ্জ্বয়ন্ত প্যালেস (রাজবাড়ি), নীরমহল, উনুকোটি, ত্রিপুশ্বেরী মন্দির, বুদ্ধমন্দির, মহামুনি প্যাগোডা, গেদু মিঞার মসজিদ, আগরতলা রেলস্টেশনসহ ত্রিপুরা রাজ্যের অসংখ্য ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনার ক্ষুদ্র সংস্করণ। রাজ্যের পর্যটন গুরুত্বের এসব স্থানের প্রতিলিপি ক্ষুদ্র আকারে তাদের অবস্থানের উল্লেখ সহ প্রতিটিতে একটি ছোট লেখার সাথে স্থাপন করা হয়েছে।
২০১২ সালে ত্রিপুরা বন বিভাগের উদ্যোগে নির্মিত হয় এই হেরিটেজ পার্কটি । প্রতিদিন ভারতের অন্যান্য রাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে দর্শনার্থীরা এসে ভীড় জমান এই পার্কে। সেই সাথে পার্কের নান্দনিক স্থাপনাগুলোর সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হন দর্শনার্থীরা।
পার্কে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবার আগরতলায় আসা দর্শনার্থী সামসুল আলম জানান, মাত্র ১০ রুপি দিয়ে পার্কে প্রবেশ করে পুরো ত্রিপুরা রাজ্যের দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনাগুলোর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করতে পেরে ভালই লাগছে। আবার অনেককেই প্রাকৃতিক মনোরম এই হেরিটেজ পার্কে বন্ধু–বান্ধবদের নিয়ে পার্কের ছাউনি তলায় বসে আড্ডায় মেতে উঠতে দেখা গেছে।
পার্কের বনায়ন অংশে ফুল ও প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে। পার্কটিকে আরও সজ্জিত করা হয়েছে হেরিটেজ বেঞ্চ, পাথরের মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ, মাটির মৃৎপাত্র, কাঠের খোদাই এবং আরও অনেক কিছু যাতে দর্শনার্থীদেরকে ক্ষুদ্র ত্রিপুরার এই শান্ত পরিবেশে আনন্দও বিনোদন দেয়।
স্থানীয় স্যান্দন পত্রিকার সংবাদ কর্মী জাকির হোসেন এর তথ্যমতে, মিনি–ত্রিপুরা বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অবস্থিত মিনি–ইউরোপ–আদলে তৈরী করা । পার্বত্য রেঞ্জ, নদী ব্যবস্থা, জলাবদ্ধ উপত্যকা, রাজ্যের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সীমানা এই অংশে প্রাকৃতিকভাবে দেখানো হয়েছে। ন্যাশনাল হাইওয়ে, স্টেট হাইওয়ে, পাহাড়ি রেঞ্জ জুড়ে টানেলের মধ্য দিয়ে চলমান রেললাইন এটিকে আকর্ষণীয় করে রেখেছে।
পার্কের সৌন্দর্য উপভোগের ফাঁকে তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ত্রিপুরা রাজ্যে অসংখ্য ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। কিন্তু সময়–সুযোগের অভাবে অনেকেই সে সকল স্থানে যেতে পারেন না। তাদের কথা চিন্তা করেই হেরিটেজ পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে।
পার্কটিতে প্রায় দুই শতাধিক লোকের বসার স্থান সহ একটি মিনি–থিয়েটার রয়েছে যা স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনার পাশাপাশি বন্যপ্রাণী, বন এবং পরিবেশ বিষয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। থিয়েটারের দক্ষিণ দিকে একটি জলাশয় রয়েছে তাতে পানির জেট স্প্রিংটি যা পুরো চত্বরের আলাদা সৌন্দর্য প্রকাশ পেয়েছে।
পার্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল সবুজাভ প্রকৃতি। পার্কের অন্যান্য আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে সরু পথ দিয়ে হাঁটা, রাজ্যের প্রাণবন্ত সংস্কৃতি এবং সংমিশ্রিত ভারতীয় ঐতিহ্যের উপস্থাপনা, ঐতিহ্যবাহী বাঁশের কুঁড়েঘর, একটি সুন্দর জীবাশ্ম ঝরণা, রক গার্ডেন, সবুজ ঘাসের মাঠ, গার্ডেনিয়া লাইট, বেশ কয়েকটি জলাশয় বেশ মনজুড়ানো।
আরো জানা যায় পার্কটি উদ্বোধনের পর প্রথমে বিনা পয়সায় পার্কে প্রবেশের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু পবর্তীতে পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশ মূল্য ১০ রুপি নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া প্রতি মাসে মাত্র ৫০ রুপির বিনিময়ে পার্কে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা দর্শনার্থীরা মর্নিং ওয়াক করতে পারেন বলেও জানা যায়।