বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগকে সহজ ও ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি দূর করেছে সামাজিক বিছিন্নতা। বলা হয়ে থাকে, প্রযুক্তি ও আধুনিকতা হাত ধরাধরি করে চলে। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ও ব্যবহার বাড়ছে। দিনদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্তি মহামারি আকারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিনের বেশিরভাগ সময় যেভাবে বুঁদ হয়ে থাকে তা দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত বৈকি! এতে যে শুধু মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে তা নয়, এর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তাদের বুদ্ধিমত্তার স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সৃজনশীলতা হারিয়ে যাচ্ছে, তাছাড়া মাথা ব্যথা, চোখের ক্ষীণদৃষ্টিসহ নানারকম শারীরিক জটিলতা ও মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিভাবক সমাজ সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আজ শংকিত। প্রকতপক্ষে যতটুকু যৌক্তিক বা প্রয়োজন ততটুকু সময়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পৃক্ত থাকা যেতে পারে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত আসক্তি মেধা ও সম্ভাবনার বিনাশ ঘটায়। বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগও বটে! যে কোনো ক্ষেত্রে টিকে থাকতে হলে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যক্তিগত দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। দক্ষতা মানুষকে সমৃদ্ধ ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলে। বিশেষ করে আইটি বা প্রযুক্তিগত দক্ষতা, বিভিন্ন ভাষা জানার দক্ষতা যে কোনো মানুষকে নানানক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে রাখে। এছাড়া ড্রাইভিং, খেলাধুলা, সংগীত, সাহিত্য চর্চা সহ নিজের ভালোলাগার বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করা যেতে পারে। বর্তমানে চাকরির বাজারে একাডেমিক সাটিফিকেট কিংবা ভালো ফলাফল যথেষ্ট নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। অনেকের পক্ষে হয়তো পড়াশোনার পাশাপাশি ঐসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জন সম্ভব ছিল। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কিছু প্রাপ্তিতে ব্যর্থ হলে অনুশোচনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। তখন নিরুপায় হয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হতে হয়। এতে কর্মজীবনের শুরুতেই পিছিয়ে পড়তে হয়। আমরা চাইলেই দিনের কিছুটা সময় ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নে ব্যয় করতে পারি বা করা উচিত। বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করে এবং আয়ের পথ খুলে দেয়। দক্ষতা উন্নয়নে সময় দিলে তা সম্ভাবনার নতুন নতুন দ্বার উন্মোচন করে। প্রকৃতপক্ষে যে কোনো বয়সের মানুষ নিজেকে তৈরি করতে বা দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। এতে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। প্রথমেই উপলব্ধি করা উচিত কোনো কোনো ক্ষেত্রে দক্ষতার ঘাটতি রযেছে। সে অনুযায়ী দিনের সময়কে ভাগ করে নিয়ে দক্ষতা অর্জনে কাজ করা উচিত। তরুণদের উচিত সে লক্ষ্যে নিজেদের ধাবিত করা। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নয় নিজের দক্ষতা উন্নয়নে কিংবা ভালোলাগার ক্ষেত্রগুলোতে বেশি সময় দিলে ব্যক্তি, সমাজ ও দেশের কল্যাণে তা অধিক কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।