গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের (নৌকা) পরাজয় ঘটবে। কিন্তু এই ভাবনা উল্টে গেল। ইতিহাস গড়লেন মা–ছেলে। আজমতের পরাজয় ও জায়েদার জয় নিয়ে গত রাত থেকেই চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। যে যার মতো করে অভিমত জানাচ্ছেন। এদিকে আজমত উল্লার পরাজয়ের তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন গাজীপুরবাসী। তারা বলছেন – ১) সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা ২) আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল এবং ৩) আজমত উল্লা খানের নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ির কর্মী–সমর্থকরাই ছিল পরাজয়ের অন্যতম কারণ। খবর বিডিনিউজের।
সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তা : এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর তিনি ৩ বছরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেন তিনি। এছাড়াও অসহায় দরিদ্রসহ বিভিন্ন মানুষকে আর্থিক সহায়তাও দেন তিনি। এভাবে নগরবাসীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন জাহাঙ্গীর আলম। যদিও মেয়র থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির ঘটনায় জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। এসময় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয় তাকে। কিন্তু এসব বিষয় শাপেবর হয়ে দাঁড়ায় জাহাঙ্গীরের জন্য। উলটো নগরবাসীর কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। আর সেই জনপ্রিয়তার সিঁড়ি বেয়ে জয়ের মুকুট ছুঁতে পেরেছেন জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল : সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এটা সর্বজন বিদিত। কিন্তু প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের ভুলের কারণে নৌকাডুবি হয়েছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় প্রথমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নানের কাছে পরাজিত হন নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খান (নৌকা)। সে হিসেবে জাহাঙ্গীরের তুলনায় ভোটব্যাংক কম আজমতের। আর সেই আজমতকেই প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপির নেতা, কর্মী–সমর্থকরা নৌকার পরাজয় দেখতে ভোট দেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকে।
নৌকার ব্যাজে টেবিল ঘড়ির কর্মী–সমর্থক : এবার নির্বাচনে জাহাঙ্গীর এবং তার মা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু ঋণখেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীরের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তার মা জায়েদা খাতুন টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ছেলেকে নিয়ে নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা শুরু করেন। মা–ছেলে ভোট প্রার্থনা করেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে। জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপক কর্মী–সমর্থক ও জনপ্রিয়তা কাল হয়ে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানের (নৌকা)। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ঘড়ি প্রতীকের তেমন এজেন্ট ছিল না। গোপনে জাহাঙ্গীর আলমের কর্মী সমর্থকরা নৌকার ব্যাজ গলায় ঝুলিয়ে ভোট দেন এবং টেবিল ঘড়ি প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। দৃশ্যত তারা ছিলেন নৌকার কর্মী, কিন্ত কার্যত তারা সবাই কাজ করেছেন জায়েদা খাতুনের পক্ষে।
এদিকে, নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। নৌকার প্রার্থী বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিছু কিছু ক্রটি ছিল, ইভিএমের কারণে, অনেকে ভোট দিতে পারেনি। ইভিএম নিয়ে এক দেড় বছর আগে থেকে মানুষকে ওয়াকিবহাল করা জরুরি ছিল। সেটা হয়নি। সেই ভোগান্তির শিকার মানুষ হয়েছেন। আমার রেজাল্ট যা হয়েছে, আমি রেজাল্ট মেনে নিয়েছি। এবং যিনি বিজয়ী হয়েছেন আমি তাকে অভিনন্দন জানাই।