বিদ্যুৎ তেল গ্যাসের কোটি টাকা বিল বকেয়া, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও লাগাম

চমেক হাসপাতাল ।। কুচ্ছ্র সাধনের নির্দেশনায় বেকায়দায় কর্তৃপক্ষ

রতন বড়ুয়া | শুক্রবার , ২৬ মে, ২০২৩ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

করোনাকালীন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধন ও বিদ্যুৎজ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনায় বেকায়দায় পড়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত মার্চ মাস থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এ প্রতিষ্ঠান। ফলে বিদ্যুৎতেলগ্যাসের কোটি টাকা বিল বকেয়া পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। কৃচ্ছ্র সাধন করতে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও লাগাম টানতে হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। জ্বালানির বিল পরিশোধ করতে না পারায় অধিকাংশ সময়েই বন্ধ রাখতে হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি দিয়েও ইতিবাচক ফল পায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ অন্য খাত থেকে এসব বিল পরিশোধের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

প্রসঙ্গত, কৃচ্ছ্র সাধন সংক্রান্ত অর্থ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামানের স্বাক্ষরে ২০২২ সালের ২১ জুলাই জারিকৃত পরিপত্রে বলা হয়পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে। বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ২৫ শতাংশ সাশ্রয় করতে হবে। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাবে না। এসব খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ অন্যকোনো খাতে পুনঃউপযোজনও করা যাবে না।

২০২২২৩ অর্থ বছরে সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে মর্মে উল্লেখ করা হয় পরিপত্রে। এই নির্দেশনার ফলে বেকায়দায় পড়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মাসে ৩০ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় হাসপাতালকে। গ্যাস বিল আসে আড়াই লাখের মতো। জ্বালানি (যানবাহনের) বিল দিতে হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। বরাদ্দ : চলতি অর্থ বছরে (২০২২২৩) বিদুৎ খাতে মোট ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে চমেক হাসপাতাল। পেট্রল বা জ্বালানি খাতে ৩০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা এবং গ্যাস খাতে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত বরাদ্দে এখনো পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। বরাদ্দে সংকট নেই। এরপরও গত মার্চ মাস থেকে ওই বরাদ্দ থেকে আর বিল পরিশোধ করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে তিন মাসে বিদ্যুৎতেলগ্যাসের কোটি টাকা বিল বকেয়া পড়েছে হাসপাতালের। বকেয়া বিল পরিশোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এরইমধ্যে কয়েক দফায় তাগিদ দিয়ে রেখেছে। তবে মন্ত্রণালয়ের সাথে কয়েক দফায় চিঠি চালাচালির পরও এসব বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কৃচ্ছ্র সাধনের নির্দেশনা মেনে পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৮০ শতাংশের বেশি ব্যয় করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ মোট বরাদ্দের ৮০ শতাংশ খরচ হওয়ায় এখন ওই খাত থেকে আর বিল পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। একইভাবে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের ৭৫ শতাংশ খরচের পর ওই খাত থেকে এখন আর বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ফলে বরাদ্দ থাকার পরও বিল পরিশোধে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। জটিলতা নিরসনে সর্বশেষ অন্য খাত থেকে হলেও এসব বকেয়া বিল পরিশোধের অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক।

অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেও লাগাম : হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছেএকটি অত্যাধুনিক আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সসহ মোট ছয়টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে চমেক হাসপাতালের। সবকয়টি অ্যাম্বুলেন্সই সচল রয়েছে বলে দাবি হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছয়টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে পাঁচটি সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সেরই চাকা ঘুরছে না কয়েক মাস ধরে। কৃচ্ছ্র সাধনের নির্দেশনায় বিল পরিশোধ করতে সক্ষম না হওয়ায় মাস কয়েক ধরে এসব অ্যাম্বুলেন্সের সার্ভিস অনেকটা বন্ধ রয়েছে। যদিও আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটির সার্ভিস চালু রয়েছে বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফেলে রাখলে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের মনিটরসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমন শঙ্কা থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি করে মাঝেমধ্যে ঢাকায় রোগী আনানেয়া করা হয়। মে মাসেও দুজন রোগীকে ঢাকায় নেয়া হয় এই আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে। অবশ্য, পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সের সার্ভিস বন্ধ রাখার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। পরিচালকের দাবি, অ্যাম্বুলেন্স একদম বন্ধ রাখার তথ্য পুরোপুরি ঠিক নয়। জটিলতার কারণে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হয়তো কম চলছে। কিন্তু একবারে সার্ভিস বন্ধ নেই। মাঝে মাঝে রোগী আনা নেয়া করা হচ্ছে। রোগীর লোকজন যোগাযোগ করলে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। এরপরও অ্যাম্বুলেন্স সেবা সার্বক্ষণিক চালু রাখার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএশিয়ার লৌহমানবী শেখ হাসিনা : দ্য ইকোনমিস্ট
পরবর্তী নিবন্ধবিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু