জলাবদ্ধতা ইস্যুতে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাধারণ সভা। গতকাল বুধবার আন্দরকিল্লাস্থ নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় বেশিরভাগ কাউন্সিলর তাদের বক্তব্যে জলাবদ্ধতার জন্য সিডিএকে দোষারোপ করেন।
এ বিষয়ে কথা বলেন সভার সভাপতি সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীও। দীর্ঘদিন পর চসিকের সাধারণ সভায় অংশ নেয়া সিডিএ প্রতিনিধির উদ্দেশে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে সিডিএর প্রকল্পে সেনাবাহিনী কাজ করলেও প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করার দায়িত্ব সিডিএর। বারবার বলার পরও এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন খালে জমা মাটি উত্তোলন না করায় এবার বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার হুমকিতে আছে চট্টগ্রাম। জনঅসন্তোষের কথা মাথায় রেখে সিডিএর ত্বড়িৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া ৩৭ নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে স্লুইচগেট সংস্কার না করায় বন্যায় শহরে সমুদ্রের পানি ঢোকার ঝুঁকি আছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর আগে জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন নাগরিক দুর্ভোগের জন্য ওয়াসা ও সিডিএর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন কাউন্সিলরগণ। এছাড়া ওয়াসার পানিতে লবণাক্ততা এবং খাবার পানির সংকটের বিষয়টিও উঠে আসে তাদের বক্তব্যে। তারা বলেন, সিডিএ এবং ওয়াসার সমন্বয়হীন কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। সরকারি সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয় না থাকলে জাতীয় নির্বাচনে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এসময় সিডিএ, ওয়াসাসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের গৃহিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব বলেন, মেগা প্রকল্পের আওতায় রাস্তায় যে ওয়াকওয়ে করা হয়েছে সেগুলে দখল হয়ে যাচ্ছে। বংশাল রোডে ওয়াকওয়ের জায়গায় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি শহরে কুকুরের উৎপাত বেড়ে যাওয়া এ বিষয়ে প্রদক্ষেপ নেয়ারও আহ্বান জানান।
প্রকল্প পরিচালক না আসা প্রসঙ্গে : সভায় চসিকের বিমানবন্দর সড়কসম্প্রসারণসহ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক চসিকে এসে অফিস না করা নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পরিচালক চসিকে আসছেন না। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্প পরিচালক না থাকায় এই বিশাল প্রকল্পের বিল প্রদান, কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রকল্পের এখনো মাত্র পাঁচশ কোটি টাকার টেন্ডার হয়েছে। অথচ এতদিনে এটি এক হাজার কোটি টাকা ছাড়ানোর কথা ছিল। আমি মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিব।
অন্যান্য : মেয়র বলেন, কোরবানির ঈদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আরো গতিশীল করতে চসিকে ১০০ টি ভ্যানগাড়ি যুক্ত হচ্ছে। চসিকের কার্যক্রমে গতি আনতে যে কোনো ফাইল গ্রহণ করার পাঁচ কর্মদিবসের বিষয়ে বিভাগীয় প্রধানদের নির্দেশনা দেন মেয়র।
তিনি বিদ্যুৎ বিভাগকে দুই কর্মদিবসের মধ্যে শহরের আলোকায়ন পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে বর্ষাকালে উন্নয়ন কাজ চলমান রাখার জন্য স্টোর নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদের নির্দেশ দেন মেয়র।
যানজট কমাতে অযান্ত্রিক যানবাহন নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, আমরা ৭০ হাজার অযান্ত্রিক যানবাহন তথা রিকশা, ভ্যান ইত্যাদিকে কিউআর কোড সম্বলিত ডিজিটাল লাইসেন্স প্লেট প্রদান করছি। এই লাইসেন্স প্লেট ছাড়া কেউ ইচ্ছামতো রিকশা–ভ্যান তৈরি করে পথে নামলে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর করার কৃতিত্ব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমি চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে আন্দরকিল্লায় পুরাতন ভবনের স্থলেই ২১ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে।
সভায় প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরবৃন্দ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব খালেদ মাহমুদসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।












