খাগড়াছড়িতে বিদেশি আম চাষে সফলতা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ২০ মে, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির পাহাড়ি মাটিতে বিদেশি প্রজাতির আম চাষে ঝুঁকছে কৃষক। পাহাড়ের আবহাওয়া উপযোগী ও মাটির গুণাগুণের কারণে বিদেশি আম চাষ করে সফলতা পাচ্ছেন কৃষক। দেশীয় প্রজাতির আমের তুলনায় ৫ থেকে ৬ গুন বেশি দামের বিক্রি হচ্ছে বিদেশি আম।

খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার ভূয়াছড়ি এলাকায় ছোট টিলা ভূমিতে প্রায় ৪২ প্রজাতির আমের চাষ করেছেন কৃষক মংশিতু চৌধুরী। আমেরিকান পামলার, রেড আইভেরি, রেড এম্পেরর, বানানা ম্যাংগো, কার্টিমন, কিউজাই, রেড লেডি, আপেল ম্যাংগো, মিয়াজাকি বা কেসিংটন প্রাইড, আরটুইটুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি আমের আবাদ করেছেন তিনি।

সরেজমিনে তার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, থোকায় থোকায় ঝুলছে বিদেশি রঙিন আম। মংশিতু চৌধুরী বলেন, আমি ২০০৬ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছিলাম। চাকরির পাশাপাশি নিজেদের জমিতে বাগান গড়ে তুলেছি। বাগানের পরিসর বাড়ার পর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত নিই। গত বছরের অক্টোবরে সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছি। বাগানে সময় দিচ্ছি।

তিনি বলেন, আম্রপালি, বারি ফোরসহ অন্যান্য দেশি আমের ফলন ভালো। কেজি প্রতি বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে বিদেশি রেড ম্যাংগোর দাম বেশ কয়েকগুণ বেশি। এর কারণে বিদেশি আমের আবাদ বাড়াতে কাজ করেছি, সফলও হয়েছি। চলতি মৌসুমে অন্তত ১৫ লাখ টাকার বিদেশি আম বিক্রির আশা করছি। প্রতি কেজি মিয়াজাকি আম বিক্রি হয় ৯০০ টাকায়, রেড আইভেরি কেজি ৭০০ টাকা, রেড এম্পেরর বা চাকাপাত ৯০০ টাকা, অস্ট্রেলিয়ান আরটুইটু বিক্রি হয় ৬০০ টাকায়, হ্যানিভিউর দাম কেজি ৬০০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় বিদেশি আম স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় না। অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়।

এই চাষি আরো বলেন, বিদেশি আমের চারা ইতালি প্রবাসী এক স্বজনের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছি। তবে এটি চাষাবাদে বাড়তি কোনো যত্ন নিতে হয় না। দেশীয় আমের মতো চাষাবাদ করা যায়।

বিদেশি জাতের আমের চাষাবাদের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছে খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। বিভিন্ন জাতের আমের ফলন, মিষ্টতাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে গবেষণা করছেন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা।

পাহাড়ের উপযোগী বিদেশি জাতের আম কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছেন খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে বেশ কিছু রঙিন জাতের বিদেশি আম এসেছে। যেসব ভিনদেশি আমের জাত এখানে এসেছে সেসব জাত ঐসব দেশে বেশ জনপ্রিয় এবং তাদের ফলনও বেশি। কৌতুহলী কৃষক এসব বিদেশি জাতের আমের চাষাবাদ করেছে এবং ভালো ফলনও পাচ্ছেন। বৈচিত্র্যময় এসব বিদেশি জাত নিয়ে আমরা গবেষণা করছি।

চলতি মৌসুমে খাগড়াছড়িতে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টরের বেশি জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। তবে এর মধ্যে কেবল মাত্র ৫ হেক্টরের জমি বিদেশি আমের চাষাবাদ হয়েছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, মূলত ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকেরা বারি উদ্ভাবিত আম্রপালি, রাংগুয়াই, বারি ফোর আমের উৎপাদন বেশি করে। তবে দাম বেশি হওয়ায় সচেতন কৃষকেরা বিদেশি আম উৎপাদন করে। বিদেশি জাত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা বানানা ম্যাংগোর আড়াই হাজার ও কাটিমন আমের ৩ হাজার চারা করেছি। কৃষকেরা এখান থেকে চারা সংগ্রহ করতে পারবে। সামনে এর পরিসর আরো বাড়াব। আর বিদেশি আম চাষি মংশিতু চৌধুরীকে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনকারী কৃষকের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘটনার দেড় বছর পর বিচার প্রক্রিয়া শুরু
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলী নদীতে মিলল নিখোঁজ জেলের মরদেহ