আমার আম্মা

পারভীন রব্বানী | বুধবার , ১৭ মে, ২০২৩ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

কোন ছেলেমেয়ের মার ভালবাসা বা অবদানের কথা লেখালেখি করে, বর্ণনা করে বা কোন দিবসে আটকে রাখা সম্ভব নয়.. এ তো মহাসিন্ধুর বিন্দু বিন্দু জল। যে জল শুধু প্রাণের তৃষ্ণা মিটায়, শীতল করে দেয় সকল ব্যাথা বেদনা।

তবু আম্মাকে নিয়ে একটু লিখতে মন চাইলো। আমার আম্মা খুবই সহজ, সরল, সাদাসিধা মানুষ ছিলেন। ১১ ভাই বোনের সবচেয়ে বড় বিধায় হয়তো এমন। শুনেছি, বিয়ের আগে আম্মা নাকি নিজে হাত ধুয়ে ভাত খেতেন না। নানা নানীর বড়ই আদুরে মেয়ে ছিলেন। লম্বা, একহারা গরনের আম্মার মাথা থেকে পা পর্যন্ত লম্বা চুল ছিলো। গ্রামে গেলে দূর দূরান্ত থেকে মেয়েরা দেখতে আসতো , মানুষের এতো লম্বা চুল কিভাবে হয়? আম্মা অনেক মেধাবী ছিলেন। তখনকার সময়ে মেট্রিক ( এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাশ করেন। গ্রামের আত্মীয় স্বজন বিয়ে দেওয়ার জন্য নানাকে চাপ দিতে লাগলেন। নানা ছিলেন কলেজের প্রিন্সিপাল। উনি বললেন, মেয়ে আমার পড়াশোনায় এত ভালো। ও অবশ্যই পড়াশোনা করবে। কলেজে পড়া অবস্থায় আম্মার বিয়ে হয়ে যায়। তবে বিয়ের অনেক পরে আম্মা এরাবিক নিয়ে বিএ পাশ করেন।

আমাদের ভাইবোনদের ছোট বেলায় আম্মাই পড়াশোনা করাতেন। আম্মা সৎ, উদার, পরপোকারী এবং মানসিকভাবে অত্যন্ত আধুনিক ছিলেন। কোন গোঁড়ামি উনার মধ্যে ছিলো না। কোন চাহিদা ছিলো না, কোন বিষয়ে কোন অভিযোগ ছিলো না। কারো সাথে রাগ করা, কিংবা কারো গীবত গাওয়া আম্মার চরিত্রের বিরুদ্ধে ছিলো। আম্মা ধৈর্য সহ্য গুণ সম্পন্ন এবং যথেষ্ট সাহসী ছিলেন। একজন মানুষ সবকিছু একসাথে পায় না। আর নানা ঘাতপ্রতিঘাত জীবনে আসেই। আম্মাও এর বাইরে ছিলেন না। পরিবারের বড় মেয়ে বলে আব্বার সাহায্য নিয়ে আম্মা ছোট ভাই বোনদের প্রয়োজনবোধে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। আর বড় শ্বশুর বাড়িকেও ক্রমাগত কন্ট্রিবিউট করে গেছেন।

আমাদের ভাইবোনদের কোন ব্যাপারে আম্মা,আব্বা কেউ জোর খাঁটাতেন না। আমাদের দুই বোনের বিয়ের ব্যাপারে আম্মা বলতেন, ‘আমার মেয়েরা যাকে পছন্দ করে, তাকেই বিয়ে করবে।’ মনের দিক দিয়ে কতোটা আধুনিক ছিলেন আম্মা। আমার দুই বাচ্চা হওয়ার সময়, অপারেশনের সময় হাসপাতালে দিনের পর দিন ডিউটি করেছেন আম্মা।

কতো কিছু নিয়ে কতো রাগ, অভিমান করেছিসব হাসিমুখে সহ্য করতেন। আসলে সুখে,দুখে আপদে বিপদে যে আগে এগিয়ে আসেন, সেই তো মা। আর সবকিছুতেই সাহস যোগাতেন। তাই তো এতো দুর্গম পথ অতিক্রম করতে পেরেছি।

এখন আম্মা না থাকলেও উনার দোয়া সব সময় আমাদের সাথে আছে। এইটুকুই সান্ত্বনা। আম্মার হাতের রান্না ছিলো অপূর্ব।আর মজার মজার আচার বানাতেন। সবাই আমাদের বাসায় আসতো আচার খেতে। আম্মামামী, চাচী, খালা হিসাবে সবার খুব প্রিয় ছিলেন আর ছিলেন ভাইবোনদের ‘বড়বু’। আমার দাদাদাদিকে আম্মা যেভাবে সেবাযত্ন করেছেন, তা আমার চোখে দেখা। শুধু দাদাদাদীর দোয়াতেই আম্মা জান্নাতবাসী হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যেনো আমার সহজ, সরল আম্মাকে বেহেশতের উচ্চ আসনে স্থান দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅসাধারণ আয়োজন
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে