অতি সামপ্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম নগরবাসীগণ একটি সমস্যার বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। তা হলো চট্টগ্রাম নগরীতে পানি সরবরাহকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা’ কর্তৃপক্ষ নগরবাসীগণকে সুপেয় পানির পরিবর্তে লবণাক্ত পানি সরবরাহ করছেন। এই বিষয়ে সাধারণ জনগণের ধারণা, ওয়াসার এই পানি ব্যবহারে অদূর ভবিষ্যতে মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে উন্নীত হবে। এই লবণাক্ত পানি পান করে বিভিন্ন জটিল রোগ হবার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এছাড়াও মানুষের ন্যূনতম চাহিদার মধ্যে সুপেয় পানির যে চাহিদা আছে তা উৎপাদনে চট্টগ্রাম ওয়াসার যে ঘাটতি বিদ্যমান তা নিকট ভবিষ্যতে নিরসন হবে এমন কোনো আশ্বাস তাঁরা দিতে পারেননি!
এমতাবস্থায় জানা যায়, দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। আমরা এর যা পরিসংখ্যান পাই তা হলো, বৈশাখ–জ্যৈষ্ঠ মাসের এই খরার সময় কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ থাকার কথা প্রায় ১৩০ মিলিমিটার। আর বর্তমান সময়ে পানির স্তর নেমে হয়েছে প্রায় ৮৭ মিলিমিটার। বৃষ্টিহীন অবস্থায় কাপ্তাই হ্রদে এসময়ে পানির পরিমাণে এই যে প্রচুর পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে এর কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে।
সমপ্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব রেজাউল করিম চৌধুরী মহোদয় চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানির সংকট এবং নিম্নমান নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরে তাঁর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘নদী–সমুদ্র এবং পাহাড় আর বন নিয়ে প্রকৃতির রাণী এই চট্টগ্রাম। কিন্তু এই সুন্দর নগরীকে আমরাই অসুন্দর করে তুলছি’।
তাঁর বক্তব্য মতে, ‘আমরা কেউ পরিবেশ ভারসাম্য সম্পর্কে চিন্তা করছি না। আমরা নগরীর নালা–নর্দমায় যে বর্জ্যসমূহ ফেলছি সেগুলো তো বটেই, তার ওপরে আমাদের যথেচ্ছ ব্যবহৃত পলিথিন–প্লাস্টিক ইত্যাদি অনবরত জমাচ্ছি নদী–নালায়’। তাঁর বক্তব্য সর্বৈব বাস্তব মেনে নিয়ে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য আমাদের অর্থাৎ চট্টগ্রাম শহরের আমজনতা সকলকেই সচেতন হতে হবে।
আমরা বুঝতেই পারছি, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কাপ্তাই হ্রদের পানি হ্রাস হওয়ায় প্রচুর ‘শ্যাওলা’ জাতীয় উদ্ভিদ এবং লতা–গুল্ম ছড়িয়ে পড়েছে বিশাল হ্রদ জুড়ে। আরেকটি সমস্যা হলো কাপ্তাই হ্রদ পানিস্তর বিপুল হ্রাস হওয়ায় আমাদের মাতৃ নদী ‘কর্ণফুলী’ এবং তারই শাখা নদী ‘হালদা’–র জোয়ার–ভাঁটার স্রোতধারায় বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করছে প্রকৃতিগত ভাবেই।
এই যে সমস্যা তা আরও প্রকট হয়ে উঠবে নিকট ভবিষ্যতে। ‘হালদা’ পাড়েই আমার পল্লী এলাকা। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে আমি ‘হালদা’ নদীকে একটি ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল’ হিসেবে গণ্য করি। কেননা ঘনঘোর বর্ষা এলেই এই হালদা নদীতে মিঠা পানির রুই, কাতল, মৃগেল, বোয়াল, চিতল ইত্যাদি আমাদের দেশীয় মাছের চারণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এই মাছগুলো তাদের বংশ বিস্তারের জন্য প্রচুর ডিম ছাড়ে বাংলাদেশের একমাত্র এ অঞ্চলের হালদা নদীর মিঠা পানির বিচরণক্ষেত্রে। এসব বিবেচনায় সামপ্রতিক সময়ে হালদার পানি নোনা হওয়ার সুবাদে ভবিষ্যতে কী প্রভাব পড়বে তা চিন্তা করে আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞবৃন্দের তৎপর হওয়া একান্তই বাঞ্ছনীয়।
পরিবেশের এসব সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘ডেল্টা প্ল্যান’ গ্রহণ করেছেন বলে জানি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ার এই কার্যক্রম সঠিকভাবে চললে মনে হয় আমরা চট্টগ্রামের নগরবাসী সহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার জনগণ এই মহা সমস্যা হতে মুক্তি পাবো।
লেখক : সাহিত্যিক।