নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে হবে

ডা. জয়া দেবী | রবিবার , ১৪ মে, ২০২৩ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ইদানীং প্রায় আমার ছেলে আমাকে প্রশ্ন করে সবার বাবা আছে আমার নেই কেন, বাবাকে কেন সৃষ্টিকর্তা নিয়ে গেলেন উত্তর খুঁজে পাই না। এভাবেই নিজের আকুতি প্রকাশ করছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউর চিকিৎসক ডা. জয়া দেবী। সন্তান জন্মের মাত্র কয়েকদিন আগে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওপারে চলে যান তরুণ স্বামী। সেই থেকে জয়ার নতুন জীবন, একলা চলার সংগ্রাম। জয়া বলেন, ওর চলে যাওয়ার ঠিক দশ দিন পর আমাদের ছেলে পৃথিবীর আলো দেখলো। এখনো মনে আছে ক্লান্তশ্রান্ত মাবাবা আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে ওর দশ দিনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে এসেই আমাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেছে। ছেলেকে নিয়ে ওর পিণ্ড দান করে আসার পর মনে হলো এবার কিছু করতে হবে। সাথে আমার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের অনুপ্রেরণা ছিলই। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পরীক্ষার। বাবা মা বললেও বিসিএস নিয়ে তখনো ভাবিনি। আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় উপর ওয়ালার ইচ্ছায় সেবার বিসিএস হয়ে গেল। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করি।

জয়ার এগিয়ে যাওয়ার মূল চালিকা শক্তি ছিল তার ছেলে, তার বাবা মার মলিন হয়ে যাওয়া মুখগুলো, তাদের ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং সর্বপরি ছেলের অনিশ্চিত ভবিষ্যত। তাঁর চলে যাওয়ার পর থেকে একটা দিনও নিজের জন্য দুশ্চিন্তা আসেনি যতটা মা হবার পর ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে এসেছে। ওর নিরাপত্তা প্রয়োজন সেটাই মাথায় ছিল। জয়া মনে করেন, পৃথিবী নিজের গতিতে চলবে। উপরে যিনি আছেন তিনি কপালে যা রেখেছেন তাই হবে। এরমধ্যেই আমরা ভালো থাকব, কাছের মানুষগুলোকে ভালো রাখব। সকল নেগেটিভিটি এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এই সমাজ সংসারের বড় একটা অংশ আপনার এগিয়ে যাওয়া পছন্দ করবে না, পিছু টানতে চাইবে। সবটা দূরে সরিয়ে রেখে নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে হবে। ছেলের বাবা নেই এটা বিধির লিখন। এটা মেনে নিয়েই পথ চলতে হবে। এখনো সে কঠিন বিষয় বোঝানোর সময় আসেনি। সময় হলে সে নিজেই সবটুকু বুঝবে। স্রষ্টা যখন এই কষ্ট তার জন্য রেখেছেন তখন সেই পরিমাণ ধৈর্য ও শক্তি স্রষ্টা সন্তানের জন্য রেখেছেন বলে আমার বিশ্বাস।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংসার সামলে সফল যে মায়েরা
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্নকে বিসর্জন দেয়া যাবে না