কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ, যাঁর চিন্তধারার আদর্শে আপামর বাঙালি বিভোর প্রতিনিয়ত। যাঁর প্রেমে মগ্ন কাব্য, কবিতা, সাহিত্য কথায় আর দর্শনে। বেঁধে রাখে যত আপন ভাবনা গানে গানে। তাই তো ‘রাবীন্দ্রিক প্রেম‘ শাশ্বত ও চিরন্তন। এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। খুব ছোটবেলায় পরিচয় হয় সহজ পাঠের সাথে। কালো কালো ছায়া ছায়া ছবিগুলো নদীর ধারে নিয়ে যেত, আমিও ‘কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি’ তে চেপে বসতাম। সেদিন ‘ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ায়‘ যে কত রোমান্টিসিজম লুকিয়ে ছিল তখন বুঝতাম না, কেয়া পাতার নৌকা বানিয়ে তাল দিঘিতে ভাসাতে যেতাম।
সেই থেকে শুরু…। তখন থেকেই মনে দানা বেঁধে চলেছে সেই ‘রাবীন্দ্রিক প্রেম’। এই প্রেমের তো কোনো বয়স নেই। তাই আজও সেই প্রেমে হাবুডুবু খাই। এই জায়গায় তো কোনো বিশেষ বস্তু বা মানুষ ধরা দেয় না। এখানে বিশুদ্ধতা, নির্মলতা, ভালোবাসার এক মমতাময় সূক্ষ্ম অনুভূতি প্রকাশ পায়। কবির সৃষ্টির মাঝে মেলে ধরি নিজের ভাবনাগুলো।
অবাক হয়ে ভাবি রবীন্দ্রনাথ ও নতুন বৌঠানের প্রেমের সার্থকতা। পৃথিবীর কোনো সম্পর্কের সাথে এই প্রেমের তুলনা চলে না। সেখানে নতুন নতুন কাব্য সৃষ্টির মাঝে স্বার্থহীন ভালোবাসা জড়িয়ে ছিল। রবীন্দ্রনাথের অনেক অমর সৃষ্টি এই নতুন বৌঠানকে ঘিরে; বৌঠানের অকাল মৃত্যুর পরেও কবির মনের এক কোণে নতুন বৌঠান ঘুমিয়েছিলেন তাঁর কাব্য সৃষ্টির সৃজনশীলতায়। মানুষের ধারণা, ব্যর্থ প্রেম জীবনটাকে বৃথা করে দেয়, মূল্যহীন হয়ে যায় জীবন! কিন্তু ব্যর্থ প্রেম জীবনকে অনেক কিছুই শিখিয়ে দেয়, তার মধ্যে থেকে যায় এক না পাওয়ার সূক্ষ্ম অনুভূতি, যেটা রাবীন্দ্রিক প্রেমের মূলধন। যার সফলতা মুক্তি পায় ব্যর্থতা থেকে। কবির ভাষায় উঠে আসে , ‘বিচ্ছেদ দুঃখ নিয়ে থাকি আমি, দেয় না সে ফাঁকি, পরিচিত আমি তারি ভাষায়’। ভালোবাসা হারিয়ে কবিই বলতে শিখিয়েছেন, ‘যদি আরও কারে ভালোবাসো, যদি আরো ফিরে নাহি আসো’। এটারই নাম কি চিরন্তন শাশ্বত প্রেম? আত্মসমর্পণ কি এটাই? কবি বলেছেন ,‘কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছদ নাই’। যে সৃষ্টি মানুষকে বাঁচতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায় সেখানেই ঈশ্বরের বাস। তাই বুঝি রাবীন্দ্রিক প্রেম অজবীথির সোপান।












