নগরীর পাহাড়তলী থানার বিটাক মোড় এলাকায় নারীঘটিত বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই কিশোর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত ৭টার দিকে স্থানীয় এক শ্রমিকলীগ নেতার অফিসে দুই পক্ষের সমঝোতা বৈঠকে এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন হলেন মোহাম্মদ মাসুম (৩০) ও মোহাম্মদ সজীব (২০)। চমেক হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে এই দুইজন মারা গেছেন। এই ঘটনায় ছুরিকাহত হয়ে চমেক হাসপাতালে শিহাব ও মেহেদী নামে দুই ভাই ভর্তি আছে। নিহত মো. সজীব স্থানীয় মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। মায়ের নাম সামছুন নাহার। তিনি পেশায় অটো রিকশা চালক। অপরজন হচ্ছে মো. মাসুম, পিতা মো. এবাদুর রহমান। তিনি পেশায় ব্যাটারির মিস্ত্রি। তারা পাহাড়তলীর ভাড়া বাসায় থাকেন। পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এক তরুণ ও তরুণীকে নিয়ে তার বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে উভয়পক্ষ। সেখানে বিরোধ মিটমাটের সময় দুষ্কৃতকারীরা পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে। তিনি আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ জানার চেষ্টা চলছে। আমাদের পুলিশের একটি দল জড়িতদের ধরতে কাজ করছে। ছুরিকাঘাতে আহতদের মেডিকেলে নিয়ে আসেন তাদের বন্ধু পরিচয় দানকারী সাগর নামে একজন। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে শিহাব নামে আমাদের এক বন্ধু তার বান্ধবীকে নিয়ে সাগরিকা স্টেডিয়াম এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিল। এসময় এলাকার তিন ছেলে তাদের ফলো করে। শিহাব তার বান্ধবীকে নিয়ে আটো রিঙা করে চলে আসার সময় তিন যুবক বিটেক মোড়ে অটো রিঙাটি আটক করে শিহাবের কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। তারা শিহাবকে চড় থাপ্পরও দেয়। শিহাব ঘটনাটি তার বড় ভাই মেহেদীসহ অন্য বন্ধুদের ফেনিে জানায়। এপর মেহেদী এসে ওই তিন যুবককে থাপ্পর দেয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর এলাকার এক শ্রমিক লীগ নেতা শিহাবকে ফোন দিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য তার অফিসে আসতে বলে। এসময় শিহাব, তার বড় ভাই মেহেদীসহ তার বন্ধুরা ওই নেতার অফিসে যায়। আগে থেকে ওই তিন যুবকও সেখানে ছিল। তাদের মধ্যে বৈঠক চলাকালে উভয় পক্ষের মারমারি শুরু হয়। এক পর্যায়ে মাসুম ও সবুজ ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হন। তাদেরকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।’ এদিকে শিহাব ও তার বড় ভাই মেহেদীও ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে জানান পাহাড়তলী থানার এসআই ইমাম।
চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপ–পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক জানান, সাগর নামে একজন ছুরিকাহত দুজনকে হাসপাতালে আনেন। হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। সাগর নিজেকে তাদের বন্ধু বলে পরিচয় দেন।
নিহত সজীবের পিতা গিয়াস উদ্দিন হাসপাতালে ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় তিনি বলেন, তার চার ছেলে চার মেয়ের মধ্যে সজীব সকলের ছোট। সে ব্যাটারিরিকশা চালায়। তার ছেলেকে কে বা কারা মেরেছে কিছুই জানেন না। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে সারাদিন রিঙা চালায়। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
এসময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত মাসুমের মা ও বোনের কান্নায় পুরো এলাকায় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মাসুমের ছোট বোন সুমাইয়া তার ভাই হত্যার কঠোর বিচার দাবি করে বলেন, আমার ভাইকে কোন কারণ ছাড়া হত্যা করা হয়েছে। আমি আমার ভাই হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। সাত ভাই–বোনের মধ্যে মাসুম পরিবারের চতুর্থ সন্তান।
হাসপাতালের মর্গের সামনে মাসুমের পিতা মো. এবাদুর রহমান বলেন, বিকেল ৪টার দিকে কে বা কারা আমার ছেলেকে ফোন করে নিয়ে যায়। কয়েক বার ফোনে ছেলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমার ছেলে আমাকে বলেছে সে বিটেক মোড়ে কাজে আছে। কিন্তু সন্ধ্যায় তার এক বন্ধু ফোন করে বলেছে মাসুমকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আনা হয়েছে হাসপাতালে এসে দেখি আমার ছেলের লাশ পড়ে আছে। এই কথা বলতে বলতে এবাদুর রহমান মুর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, আমার ছেলে সারাদিন ব্যাটারির দোকানে কাজ করে। রাতে বাসায় ফিরে আসে। আমার নিরাপরাধ ছেলেকে যারা হত্যার করেছে আমি তাদে কঠোর শাস্তি চাই, তাদের ফাসি চাই। তারা কেন আমার ছেলেকে হত্যা করলো? আমার ছেলে কারো কোনো দোষ করেনি।