কক্সবাজারের চকরিয়ায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কেটে লুটের সময় বনকর্মীদের সঙ্গে দুই দফায় ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে সংঘবদ্ধ বনদস্যুদের মধ্যে। এতে বনবিভাগের চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। অপরপক্ষে বনদস্যু–সন্ত্রাসীদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলেও তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহত বনকর্মীদের মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তম্মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বনবিভাগ জানিয়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেল ৩টার দিকে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের নিয়ন্ত্রণাধীন ডুলাহাজারা বনবিটের পূর্ব ডুমখালীর সংরক্ষিত বনের রিজার্ভপাড়ায় প্রথম এবং কিছুক্ষণ পরে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কার্যালয়েও দ্বিতীয় দফা হামলা চালায় বনদস্যু–সন্ত্রাসীর দল। আহত বনকর্মীরা হলেন– ডুলাহাজারা বনবিটের ফরেস্ট গার্ড গোলাম জিলানী সুমন (৪০), ডুলাহাজারা বনবিট কর্মকর্তা অবনী কুমার রায় (৫০), সূর্য কুমার সিংহ (৩৬) ও বাগান মালি সাহেদুল মোস্তফা (২০)। তম্মধ্যে চোখে, শরীরে গুলিবিদ্ধ ফরেস্ট গার্ড গোলাম জিলানী সুমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অপরদিকে বনদস্যু–সন্ত্রাসীদের মধ্যে অন্তত ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে তাদের পরিচয় বা তারা কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আহত ডুলাহাজারা বনবিট কর্মকর্তা অবণী কুমার রায় জানান, শনিবার বিকেল তিনটার দিকে সংরক্ষিত বনের পূর্ব ডুমখালী রিজার্ভ পাড়া থেকে তিনটি আকাশমণি প্রজাতির বড় সাইজের গাছ কেটে ফেলে বনদস্যুরা। এর পর সেই কাটা গাছ টুকরো করে নিয়ে যাওয়ার সময় ঝটিকা অভিযানে যায় বনবিভাগ। সেই মুহূর্তে বনবিভাগের কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে সংঘবদ্ধ বনদস্যু–সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে বনদুস্যরা পিছু হটলে সেখান থেকে দুটি গাছের টুকরো উদ্ধার করে রেঞ্জ কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
বিট কর্মকর্তা আরো জানান, সাড়ে তিনটার দিকে ফের সংঘবদ্ধ বনদস্যু–সন্ত্রাসীদলের অন্তত ১৫০ জন একযোগে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কার্যালয় লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। এ সময় বনবিভাগও পাল্টা জবাব দেয়। এ সময় বনবিভাগের চারজন গুলিবিদ্ধ হয়। তদ্মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নলবিলা বিট কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, বনকর্মী ও বনদস্যু–সন্ত্রাসীদলের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষে বনবিভাগের পক্ষে অন্তত ১৬ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হয়। অপরপক্ষ বনকর্মীদের লক্ষ্য করে অন্তত ৫০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে।
বনদস্যু–সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ডুলাহাজারা রিজার্ভ পাড়া : ডুলাহাজারা ইউনিয়নের সচেতন একাধিক বাসিন্দা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ইউনিয়নের পূর্ব ডুমখালী রিজার্ভ পাড়াটি গত দেড়বছর ধরে বনদস্যু–সন্ত্রাসীদলের অভয়ারণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে আইন–শৃক্সখলা বাহিনীর তৎপরতা বা অভিযান না থাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোও প্রতিনিয়ত জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় সংঘবদ্ধ বনদস্যু–সন্ত্রাসীদলের সদস্যরা ধর্ষণ, বনের গাছ উজাড়, ডাকাতি, দস্যুতা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে আসছে রিজার্ভপাড়ায়। অনেক পরিবার তাদের কম বয়সী মেয়েদের বাড়িতে রাখা অনিরাপদ মনে করে অন্যত্র স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সচেতন লোকজন আরো জানান, কেউ এই সংঘবদ্ধ বনদস্যু–সন্ত্রাসীদের নাম–পরিচয় জানলেও মুখ খোলার সাহস রাখে না। কারণ সন্ধ্যার পর হলেই পুরো রিজার্ভপাড়ায় তাদের রাজত্ব শুরু হয়। তারা দিনের বেলায় এখানে–ওখানে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকলেও সন্ধ্যার পর এখানে জড়ো হয়। এলাকায় অপরিচিত কোনো লোক দেখলেই এসব সন্ত্রাসীদলের সদস্যের কাছে কৈফিয়ত দিতে হয় এবং সর্বস্ব লুটে নেয় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিজার্ভপাড়ার একাধিক বাসিন্দা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ইতোপূর্বে বনদস্যু–সন্ত্রাসীদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন ৪০ জনের একটি তালিকা পুলিশ প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের দমনে আইন–শৃক্সখলা বাহিনীর কোনো ধরনের অভিযান বা তৎপরতা দেখা যায়নি। এ কারণে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ বনদস্যু–সন্ত্রাসীরা। আর তাদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন স্থানীয়ভাবে রাজনীতিতে প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তি।
বনকর্মীদের সঙ্গে বনদস্যুর গোলাগুলির ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবদুল জব্বার দৈনিক আজাদীকে বলেন, বনবিভাগের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।