বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সাবেক মহকুমা ও ইতিহাস–ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এবং শিল্প–সাহিত্য–সংস্কৃতিতে উর্বর ভূমিখ্যাত চট্টগ্রাম নগরীর পাশের উপজেলা দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে এর গোরবৌজ্জ্বল ইতিহাস। পটিয়া সকল অবকাঠামোগত দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও এখানে এখনও গড়ে উঠেনি কোনো শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র। অথচ উপজেলার পূর্ব দিকে হাইদগাঁও ও কেলিশহরের পাহাড়ি এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। কেবল দরকার পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সরকারি কিংবা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কোনো বিনোদন কেন্দ্র ও শিশুপার্ক গড়ে না উঠায় বিনোদন বঞ্চিত হচ্ছে পটিয়ার স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লাখো মানুষ। হাইদগাঁও–কেলিশহর পাহাড়ি এলাকা ও পাদদেশের লেক এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। বর্তমানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এ পাহাড়ি অঞ্চলে প্রতিদিন দূর–দূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক ভিড় জমায়। পটিয়া সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে হাইদগাঁও বুদবুদি ছড়ার অবস্থান। পর্যটকদের কাছে এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান। এর দক্ষিণে শ্রীমতী খাল। শ্রীমতী খাল ও হাইদগাঁও–কেলিশহর পাহাড়ি এলাকায় বিশালাকৃতির পাহাড়ের অংশে রয়েছে চোখজুড়ানো সবুজের সমারোহ ও মনোরম দৃশ্য যা সবার নজর কাড়ে। এছাড়াও এখানে রয়েছে বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ২৬ হাজার একর বনভূমি ও অসংখ্য লেক।
কচুয়াই ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলে রয়েছে চা–বাগান। এত সম্ভাবনা থাকার পরও স্বাধীনতার ৫১ বছরেও এখানে গড়ে তোলা হয়নি কোনো বিনোদনকেন্দ্র ও শিশুপার্ক। ফলে ঈদ ও পূজা–পার্বণে কাছাকাছি কোনো পার্ক, লেক কিংবা উদ্যানে গিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে মন সতেজ বা চাঙা করার সুযোগ পান না বিনোদন প্রেমীরা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের ডাকবাংলোয় ৭০ শতক জায়গাজুড়ে ১৯৮২ সালে একটি শিশু পার্ক গড়ে উঠলেও নানা সীমাবদ্ধতায় তার কোনো প্রসার ঘটেনি। একসময় সেখানে দুটি বড় ছাতা, আটটি দোলনা ও কয়েকটি চরকি সিঁড়ি থাকলেও বর্তমানে তা পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে বিনোদনবঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। এর সম্প্রসারণ ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বিনোদন পিয়াসীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কৃতিকর্মী অধ্যাপক অভিজিত বড়ুয়া মানু বলেন, শিশু–কিশোরদের মানসিক বিকাশে পড়ালেখার পাশাপাশি বিনোদনের কোনো বিকল্প নেই। পটিয়া একটি স্বনামধন্য ও শিল্প সাহিত্য এবং আন্দোলন সংগ্রামের উর্বরভূমি। এখানে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫১ বছরেও কোনো বিনোদন কেন্দ্র ও শিশুপার্ক গড়ে না উঠা পটিয়ার জন্য খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। সরকারিভাবে একটি যুগোপযোগী বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা পটিয়াবাসীর প্রাণের দাবি।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আতিকুল মামুন বলেন, এ নিয়ে জেলা পরিষদের মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। যেহেতু জেলা পরিষদের অধীনে ডাকবাংলোয় ছোট একটি পার্ক ছিল। সেখানে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে বড় পরিসরে একটি পার্ক করার প্রস্তাবনা আছে। এর বাইরে বর্তমানে উপজেলা পরিষদের পাশে নবনির্মিত এক হাজার আসন বিশিষ্ট জেলা পরিষদ শেখ কামাল অডিটোরিয়ামের সামনে যে জায়গা রয়েছে সেখানেও একটি পার্ক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পটিয়া আদালত পুকুর ও উপজেলা পুকুরে চতুর্পাশে ওয়াকওয়ে স্থাপন করে একটি সৌন্দর্যবর্ধক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পটিয়ার মানুষের বিনোদনের আপেক্ষ কিছুটা হলেও ঘুচবে।












