ঘূর্ণিঝড়ের খবরে উপকূলে জানমাল রক্ষার প্রস্তুতি

কক্সবাজারে মাঠের ধান ও লবণ মজুদ করার তোড়জোড়

চকরিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ৬ মে, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

আগামী ১২ বা ১৩ মে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর আগে ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার এমন খবরে আতঙ্ক বিরাজ করছে কক্সবাজার উপকূলজুড়ে। এই অবস্থায় বিগত ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে সংঘটিত মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘হ্যারিকেন’ এর ভয়াবহতার কথা মাথায় রেখেই উপকূলের মানুষ তাদের জানমাল রক্ষায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে হাতে থাকা সময়ের মধ্যে নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে।

বিশেষ করে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে পরিবারপরিজন নিয়ে যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে, মাঠে মাঠে থাকা ধানসহ রকমারি ফসল আগেভাগে গোলায় তোলা এবং উৎপাদিত লবণ মাঠ থেকে গর্ত ও গুদামে মজুদ করার তোড়জোড় চলছে উপকূলজুড়ে। সরজমিন উপকূলীয় জনপ্রতিনিধি ও লবণ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ করিয়ারদিয়ার বাসিন্দা জেলার লবণ চাষি সিরাজুল মোস্তফা দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া

মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে আমরা উপকূলবাসী যারা স্বজন হারিয়েছি তারা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ঘূর্ণিঝড়ের নতুন কোনও বার্তা পেলেই সচেতন হয়ে উঠি।

তিনি আরো বলেন, কয়েকদিনের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’ আঘাত হানবে এমন আভাস পেয়েই উপকূলের মানুষ তাদের জানমাল রক্ষায় পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। মাঠে মাঠে উৎপাদিত লবণ নিরাপদে গর্ত ও গুদামে মজুদ প্রক্রিয়া চলছে।

কক্সবাজার জেলা লবণ চাষি সমিতির সভাপতি

অ্যাডভোকেট এইচ এম শহীদুল্লাহ চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘৬২ বছরের মধ্যে চলতি মৌসুমে প্রচণ্ড দাবদাহে বিপুল পরিমাণ লবণ উৎপাদন হয়েছে। সামনে আরো যে কয়দিন সময় হাতে রয়েছে তাতে সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রেকর্ড লবণ উৎপাদনের আশা চাষিদের। তাই ইতোমধ্যে উৎপাদিত লবণ প্রতিদিনই গর্ত ও গুদামে মজুদের তোড়জোড় চলছে। পাশাপাশি মাঠে বিছানো পলিথিনও যথাসময়ে তুলে ফেলা হবে।’

শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিসিক কক্সবাজার কার্যালয় সূত্র জানায়, গেল এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত চলতি মৌসুমে মোট লবণ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন। বিগত বছরে লবণ উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১৮ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। এই মৌসুমে মোট লবণ চাষ হওয়া জমির পরিমাণ ৬৬ হাজার ৪২৪ একর, গত বছর ছিল ৬৩ হাজার ২৯১ একর। গত বছরের তুলনায় এবার লবণ চাষের জমি বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ হাজার ১৩৩ একর। এবার লবণ চাষির সংখ্যা ৩৯ হাজার ৪৬৭ জন, যা গত বছর ছিল ৩৭ হাজার ২৩১ জন। গত বছরের তুলনায় লবণ চাষির সংখ্যাও বেড়েছে ২ হাজার ২৩৬ জন। চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২০ লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লবণ চাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় ‘মোচা’র সম্ভাব্য আঘাতে জামনালের ক্ষয়ক্ষতি শূন্যের কোটায় রাখতে ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে বেশ তৎপর রয়েছে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে চকরিয়ার ইউএনও জেপি দেওয়ান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) সকল ইউনিটকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। লবণ চাষিসহ সকল দপ্তর বা সংস্থাকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীর সৈকতে সম্ভাবনার হাতছানি
পরবর্তী নিবন্ধজীবন-জীবিকার সব নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে : ফখরুল