আল্লাহর ঘরে গিয়ে এ’তেকাফ করার অপূর্ব সুযোগ

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ৫ মে, ২০২৩ at ৭:১৪ পূর্বাহ্ণ

এ’তেকাফ মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্যলাভের একটি অন্যতম মাধ্যম। মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে রমজান মাসের শেষ দশকে রোজাদার মুসলিম এলাকার মসজিদ কিংবা আল্লাহর পবিত্র ঘর হারামাঈন শরিফাইন অথবা মসজিদে নববীতে এ’তেকাফ নামক মহান ইবাদতে মশগুল থাকেন। দুনিয়ার সমস্ত লোভ লালসা, ব্যবসাবাণিজ্য, লেনদেন, পারিবারিক সমস্যাসমূহ ইত্যাদি থেকে সম্পূর্ণ নিজেকে মুক্ত রেখে আল্লাহর রাহে আত্ননিয়োগ করার উত্তম সদিচ্ছার নামই এ’তেকাফ। এটি একটি মহান ইবাদত। বিশেষ নিয়তে আল্লাহরতায়ালার আনুগত্যের মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে মসজিদে অবস্থান করাকে মূলত এ’তেকাফ বলা হয়। পবিত্র মদিনায় অবস্থানকালীন আমার রাসূল (সাঃ) প্রতি বছর এ’তেকাফ পালন করেছিলেন। দাওয়াতি কাজ, ইসলামি শিক্ষা এবং পবিত্র জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি কোন রমজানে এ’তেকাফ ছাড়েননি। এ’তেকাফ ঈমানকে উজ্জীবিত করার একটি মহান পন্থা। ঈমান চর্চা ও উপলব্ধির একটি সমৃদ্ধ পাঠশালা। এ’তেকাফরত অবস্থায় মুমিন বান্দা আল্লাহর রাহে হৃদয় মন দিয়ে আত্ননিয়োগ এর মাধ্যমে পার্থিব সকল কার্যক্রম থেকে নিজেকে বিমূখ করে নেয়। সর্বদা ইবাদতে মশগুল থাকেন শুধুমাত্র আল্লাহর নৈকট্যলাভের আশায়। এ’তেকাফ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল করীমে আল্লাহতায়ালা সূরা বাকারার ১২৫ নং আয়াতে বলছেন, ‘এবং আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলামযেন তারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারীদের জন্য, আল্লাহর ইবাদতে আত্ননিয়োগকারীদের জন্য, রুকু সেজদাহকারীদের জন্য পবিত্র করে রাখে’। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পিতা আযর এবং তাঁর জাতিকে লক্ষ্য করে মূর্তির ভৎর্সনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘এই মূর্তিগুলো আসলে কিযার জন্য তোমরা শক্ত হয়ে বসে আছো’সূরা আম্বিয়া৫২। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূল (সাঃ) রমজানের শেষের দশকে এ’তেকাফ করেছেন ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তাঁর স্ত্রীগণ এ’তেকাফ করেছেন’ (সহীহ বুখারীমুসলিম)। পবিত্র বুখারী শরীফের ২০৪১ নং হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘রাসূল (সাঃ) প্রত্যেক রমজানে এ’তেকাফ করতেন’। অন্য এক হাদীসে এসেছে– ‘আমি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে এ’তেকাফ পালন করি। অথবা এ’তেকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহীর মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এই রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে এই দশে এ’তেকাফ পালনে আগ্রহী সে যেন তা পালন করে। রাসূল (সাঃ) বলেন, আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে আমি সেই ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অতঃপর রাসূল (সাঃ) একুশে রাতে ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কেয়ামুল লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দন্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি নেমে এলো এবং মসজিদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তাঁর কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদাসেটি ছিল একুশের রাত’। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনরাসূল (সাঃ) প্রতি রমজানের শেষ দশ দিন এ’তেকাফ করতেন। তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হনসে বছর তিনি বিশ দিন এ’তেকাফ করেছেন। এ’তেকাফকারী এক নামাজের পর আরেক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন, এই অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনরাসূল (সাঃ) বলেছেন, নিশ্চয় ফেরেস্তারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন। যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করেন। তারা বলতে থাকে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহ তাঁর প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে ও নামাজ তাকে আটকিয়ে রাখবে, তাঁর পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেস্তারা তাঁর জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে। এ’তেকাফকারী লাইলাতুল কদরের রাত তালাশ করতে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে। এই রহস্যের কারণে আল্লাহতায়ালা সেটিকে বান্দাদের কাছ থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা সারা মাস ধরে তালাশ করতে থাকে। এ’তেকাফ করার ফলে বান্দার সাথে আল্লাহতায়ালার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় হয় এবং আল্লাহতায়ালার সামনে মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। এ’তেকাফ অবস্থায় একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের নিরাশ করেন না। তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, তিনি পরম দয়ালু’সূরা ঝুমার৫৩। এ’তেকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানদের অন্তরে কঠোরতা দূরীভূত হয়ে। কেননা পার্থিব ভালবাসা ও অন্যান্য সংমিশ্রণে কঠোরতা সৃষ্টি হয়। মসজিদে অবস্থানের কারণে সে কঠোরতা দূর হয়ে যায়। এ’তেকাফকারী ব্যক্তির আত্না সর্বদা মসজিদের সাথে আটকানো থাকে এবং আল্লাহর রাহে একাগ্রচিত্ত হয়ে ইবাদতে মগ্ন থাকে। এই এ’তেকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি ও খোদাভীতি সৃষ্টি হয়। তওবা করার অন্যন্য সুযোগ লাভ হয়। তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায় এবং সময়টাকে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়। নিজের ব্যস্ত জীবনটাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়। এবার জিন্দেগীর প্রথম এ’তেকাফ করার সুযোগ লাভ করেছিলাম। প্রথম দিন মদিনা থেকে আসার কারণে ওমরা করার সুবাদে এতেকাফে বসা সম্ভব হয়নি। পরের দিন সকালে অর্থাৎ একুশ রমজানে খুব সকাল সকাল মক্কার হোটেল থেকে রওয়ানা দিয়ে পুরাতন হারাম শরীফের ৮৪ নম্বর গেইট দিয়ে ঢুকে সরাসরি তিন তলায় যাওয়ার সুযোগ হয়। একটি খালি জায়গায় বসে পড়ি চটপট। তখন সবাই ঘুমাচ্ছিলেনসকাল সাড়ে আটটা হবে হয়তো। আমার পাশেই একজন আধ বয়সী ভদ্রলোক পরিচয়ের সূত্র ধরে জানলাম ঢাকার ট্রাভেল ব্যবসায়ী এবং চ্যানেল আইয়ের ইসলামী প্রোগ্রামের সঞ্চালক, আততায়ীর হাতে নিহত মরহুম নুরুল ইসলাম ফারুকীর ছোট ভাই। নাম মোঃ আব্দুর রব। ধীরে ধীরে তাঁর সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে। নিজের অজান্তেই আল্লাহর রাহে এতেকাফের নিয়ত করে ফেললাম। আলহামদুলিল্লাহ। পরদিন সকালে অর্থাৎ বাইশ রমজান বৃহস্পতিবার হঠাৎ সৌদি পুলিশ চওড়া হয় এ’তেকাফকারীদের উপর। সবাইকে তুলে দিলআমরা সবাই অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইলাম। অনেক সৌদি এ’তেকাফকারী পুলিশদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন। তারা নাছোড়বান্দাকোনমতে আর বসতে দিবেন না। অগত্য বাক্সপেটেরাসহ নতুন হারামের দিকে যাত্রাআবদুল্লাহ এক্সটেনশন। তিনতলায় দু’জনের মতন বসার জায়গা খুঁজে পেলামআমি আর রব ভাই চটপট জায়নামাজ বিছিয়ে দিলাম। আমি হাম্মামে জরুরতে যাই। এসেই দেখি স্থানটা বেমালুম ভুলে গিয়েছি। অনেক পড়ে রব ভাই আমাকে ডাক দিলেন আবারও হিংস্র সৌদি পুলিশের অসদাচরণ, আক্রমণাত্মক হয়ে সবাইকে আবার উঠিয়ে দিলেন। আমরা আবারও নিরাশ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলাম। হাঁটতে হাঁটতে হারাম শরীফের ছাদে একটি জায়গা খুঁজে পেলাম। ওখানে ঝটপট বসে পড়লাম, রব ভাই অন্যদিকে। মনে হচ্ছে এখানেই টিকে যাব। ২৯ রমজান পর্যন্ত এখানেই রইলাম। প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে হাজার হাজার এতেকাফকারী ছাদে অবস্থান নিলেন। রোদ আর ঠাণ্ডা দু’য়ে মিলে সবার কাহিল অবস্থা। তবে সুবিধা হলঅযুখানার ব্যবস্থা রয়েছে। একদম নিচে গিয়ে হাম্মাম সারার সুযোগটা পাওয়া যায়। খুব সকালে ভিড়টা একটু কম থাকেএটাই নতুন হারামের বাড়তি সুযোগ এ’তেকাফকারীদের জন্য এ’তেকাফকারীগণ বিভিন্ন দেশের নাগরিক। আমাদের পাশে মিশরীয় তিন নাগরিক অত্যন্ত বন্ধু বৎসলসদালাপি। সেহেরীর সময় একত্রে খাওয়ার আমন্ত্রণ, আশেপাশে অনেকেই যেচে খাবার বিতরণএ যেন এক অপূর্ব ভালবাসার মিলনমেলা। এক গভীর আত্নিক সম্পর্ক হয়ে গেছে নিজেরই অজান্তে। রব ভাই ভালো আরবী জানেনযার ফলে আরবী ভাষাভাষীদের সাথে মেশাটা খুব সহজ হয়ে গেল। তবে যে অসংগতিটা আমার চোখে ধরা পড়েছে সেটা হলঅতিরিক্ত কথা বলা, উচ্চ আওয়াজে কথা বলা, একসাথে গোল হয়ে বসে খাওয়াদাওয়া করা। টেলিফোনে উচ্চ আওয়াজে কথা বলা। হাসাহাসি করা, ফেইসবুক লিড করা, অতিরিক্ত ঘুমানো (ফজরের নামাজের পর ৫ ঘন্টা, দুপুরের পর, আবার আছরের পর) যেটা একজন বিশুদ্ধ এ’তেকাফকারীর পক্ষে যায় না। আমরা ছোটবেলায় আমাদের আব্বাকে দেখতাম এ’তেকাফ অবস্থায় কারো সাথে বিন্দুমাত্র কথা বলতেন না। আমরা দুষ্টুমি করলেও হাসতেন না, মাটির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাম্মামে যেতেন ও আসতেন। সালাম দিলেও সালামের জবাব দিতেন না (হয়তো বা মনে মনে দিতেন)। দশদিন শুধুমাত্র সহযোগী এ’তেকাফকারীদের সাথে মৃদু কথা বলতেন। আর এ’তেকাফকারীদের সমস্ত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকত উনাদের মাঝে। আল্লাহর ঘরে এসে এ’তেকাফ করার এই অপূর্ব সুযোগ আদৌ ভবিষ্যতে মিলবে কিনা তা সন্দেহ। কারণ রেজিষ্ট্রার্ড এ’তেকাফকারী ব্যতীত ননরেজিষ্টার্ড এ’তেকাফকারীদের মসজিদুল হারামে অবস্থান অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শুধুমাত্র স্থানীয় সৌদি নাগরিক ছাড়া অন্য ভাষাভাষীদের রেজিষ্ট্রেশন খুব একটা দেওয়া হয় না। নির্ধারিত এ্যাপস এ ঢুকেও রেজিষ্ট্রেশন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। শক্ত সৌদি নাগরিকের সুপারিশ ছাড়া বাংলাদেশীদের রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব নয় বলে জেনেছি। ননরেজিষ্ট্রার্ড লাখ লাখ এ’তেকাফকারী মানবেতর রাত যাপন করেছেন এই দশ দিন। সৌদি পুলিশের তাণ্ডবে অনেক এ’তেকাফকারী এ’তেকাফ ছেড়ে মক্কার হোটেলসমূহে অবস্থান করেছেন। আর এদিকে এ কয়েক বছরের পর্যবেক্ষণে যেটা দেখেছি এবং জেনেছিসম্পূর্ণ আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ’তেকাফকারীদের সংখ্যা হাতে গোণা কয়েকজনএটাই আমার কাছে খুব বেশি অসংগতি মনে হয়েছে। আর কাবা শরীফের ইমামদের মুনাজাতে বর্বর ইসরায়েলীদের আক্রমণে নিহত নিরীহ ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনো দোয়া করতে দেখা যায়নি। যারা বিশ্বের বরেণ্য আলেমে দ্বীনের উপর অন্যায়, অবিচার, নির্যাতন ও কারারুদ্ধ করার যে নির্মম ঘটনাতার জন্যে কোনো দোয়ার আসর দেখিনি। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। সারা বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের আশাভরসার প্রতীক পবিত্র হারামাঈন শরীফাইনসেখানেই খুঁজে পাওয়া যায় আশাভরসা ও আস্থার ঠিকানা। সেখানেই যদি কারারুদ্ধ ও নির্যাতিত আলেম ওলামাদের জন্যে দোয়ার আর্জি করা না হয়, তাহলে আমাদের যাওয়ার পথ কোথায়? এটাই এখন অবিবেচ্য প্রশ্ন হিসাবে দাঁড়িয়েছে। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সত্যিকারের এ’তেকাফকারীদের সারিতে যেন রাখেনসেই আর্জিটুকুন মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে রাখছি এবং এ’তেকাফের মান ও মর্যাদা যেন বজায় থাকে। আমিন।

লেখক: সভাপতিরাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় ভূমিকম্পে ঘুম ভেঙে আতঙ্ক
পরবর্তী নিবন্ধনতুন সিনেমায় নিশো