খালেদাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের

আজাদী অনলাইন | বৃহস্পতিবার , ৪ মে, ২০২৩ at ৯:৩৪ অপরাহ্ণ

লিভার জটিলতা নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়াকে ফের বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড।

পাঁচ দিন রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি আজ বৃহস্পতিবার (৪ মে) বাসায় ফেরার পর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, বিএনপি নেতা অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন এই তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “উনার (খালেদা জিয়ার) হার্টের যে ব্লক, ওই সময়ে (গত বছরের আগস্ট) একটাকে ব্লক অ্যাড্রেস করা হয়েছিল। বাকি দুইটা ব্লক আছে- সেটা আপনারা জানেন। আর উনার ক্রনিক লিভার ডিজিজের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের রিকমেন্ডেশন ছিল- টিপস করার জন্য অর্থাৎ পোর্টাল যে ব্লাড প্রেসার, সেটা কমানোর জন্য এটা এক ধরনের জন্য বাইপাস…লিভার হাইপারটেশনের বাইপাস। সেই সার্জারি বাংলাদেশে যেমন হয় না এবং আশেপাশের অনেক দেশেই হয় না। সেটির জন্য তারা (চিকিৎসক) আগেও রিকমেন্ড করেছিল- মাল্টি ডিসিপ্লানারি অ্যাডভান্স সেন্টারে উনার চিকিৎসা করানোর জন্য, টিপস করানোর জন্য। এবারও এন্ডোসকপি করানোর পর ডাক্তার সাহেবরা আবারও সর্বসম্মতভাবে উনার টিপস করানোর জন্য রিকমেন্ড করেছে যে যত দ্রুত সম্ভব সেটা করতে।”

বিএনপি’র পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর দাবি জানানো হচ্ছে। তার পরিবার থেকে আবেদনও করা হয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে শর্তাধীনে কারামুক্ত খালেদার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই।

আজ বৃহস্পতিবার বিকালে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সন্ধ্যায় ওই বাসার সামনে সাংবাদিকদের সামনে এসে দলীয় নেত্রীর সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাহিদ।

তিনি বলেন, “উনার (খালেদা জিয়ার) টিপস করালে উনার পোর্টাল প্রেসার কমবে, পোর্টাল প্রেসার কমলে উনার পোর্টাল হাইপারটেনশনের জন্য যে জটিলতা হয়, লিভারের যে জটিলতা হয়- সেই জটিলতাগুলো অনেকাংশে নিরসন হবে, তিনি স্বাভাবিকভাবে আরও বেশি সুস্থবোধ করবেন। সেজন্য উনারা (মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা) রিকমেন্ড করেছেন (বিদেশে নিতে)।”

প্রসঙ্গত, গত ২৯ এপ্রিল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। পরে তাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তার চিকিৎসা চলে।

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, “উনার যে সমস্ত উপসর্গ দেখা দিয়েছিল সেগুলোর চিকিৎসা গত ৪/৫ দিনে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকরা উনাকে বাসায় রেখে উনাদের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাডাম কিছুক্ষণ আগে বাসায় ফিরেছেন। ম্যাডাম আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।”

৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি জটিলতা ও লিভারের রোগে ভুগছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে কয়েকবার নানা অসুস্থতা নিয়ে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।

গত বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর।

এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড স্থগিত করেন ছয় মাসের জন্য।

ওই বছরের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গুলশানে তার বাড়িতে রয়েছেন। প্রতি ছয় মাস পরপর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে পরিবারের আবেদনে।

ব্রিফিংয়ের সময় বিএনপি’র আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. আল মামুন, হেলেন জেরিন খান, রেহানা আখতার রানু উপস্থিত ছিলেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটায় লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধক্রেমলিনে ড্রোন হামলার পিছনে যুক্তরাষ্ট্রঃ রাশিয়া