ঢাকার নয়াবাজারের পেপার মার্কেটের সাদিক এন্টারপ্রাইজ সম্প্রতি চীন থেকে ৪৯ টন হোয়াইট ব্যাক ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতেও ডুপ্লেক্স বোর্ডের দুটি চালান নিয়ে আসে আমদানিকারক। দু’বারই প্রতি টন ডুপ্লেক্স বোর্ডের শুল্কায়ন হয়েছে আমদানিকারকের ঘোষিত ৭৩০ ডলারেই। তবে এবার ঘটেছে বিপত্তি।
আমদানিকারকের অভিযোগ, চট্টগ্রাম কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট শুল্কায়ন শাখার কর্মকর্তারা ডুপ্লেক্স বোর্ডের শুল্কায়ন করতে চায় ৮৮০ ডলারে। এই নিয়ে আমদানিকারককে দিনের পর দিন কাস্টমস কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে ধর্না দিতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার বরাবর চিঠি লিখেছেন চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ, বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্টস এসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পেপার ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের নেতারা। চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন, হোয়াইট ব্যাক ডুপ্লেক্স বোর্ড প্রতি টন ৭৩০ ডলারে শুল্কায়ন হয়ে আসছে। কিন্তু বর্তমানে ৭৩০ ডলারের পরিবর্তে ৮৮০ ডলারে শুল্কায়ন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে আমরা জেনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। জানতে চাইলে সাদিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফারহান সাদিক বলেন, ডুপ্লেক্স বোর্ড দুইভাবে আমদানি হয়, একটি গ্রে ব্যাক, আরেকটি হোয়াইট ব্যাক। আমাদের আমদানিকৃত পণ্যটি হোয়াইট ব্যাক। এই পণ্যটি ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আমরা দুইবার আমদানি করেছি। দুইবারই ৭৩০ ডলারে শুল্কায়ন হয়েছে। কিন্তু এখন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সেটি ৮৮০ ডলারে শুল্কায়ন করতে চায়। অথচ একই এইচএস কোডে ডুপ্লেক্স রোল হোয়াইট ব্যাক প্রতি টন ৬৫০ ডলারে শুল্কায়ন হচ্ছে। অন্যদিকে ডুপ্লেক্স রোল গ্রে ব্যাক শুল্কায়ন হচ্ছে ৬০০ ডলারে। গ্রে ব্যাক ডুপ্লেক্স বোর্ডের আন্তর্জাতিক মূল্য ৫৫০ ডলার। গ্রে ব্যাক শিট ও রোলের মধ্যে পার্থক্য ২০ ডলার। এখন হঠাৎ করে শুল্কায়নে মূল্য বাড়ানো হলে আমরা অসম প্রতিযোগিতায় পড়বো। অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমসে উভয় পাশে কোটেড আর্ট পেপার শুল্কায়নও হচ্ছে ৭৩০ ডলারে।
চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ডুপ্লেক্স বোর্ডের শুল্কায়ন সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এছাড়া আমাদের সংগঠন ছাড়াও আরো দুটি সংগঠন ওনাকে চিঠি দিয়ে হোয়াইট ব্যাক ডুপ্লেক্স বোর্ডের শুল্কায়ন আগের মতো ৭৩০ ডলারে করার অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু ওনি চিঠিতে একজন উপ–কমিশনারকে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের আলোকে মূল্য সুপারিশের জন্য একটি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেন। তিনি তো চাইলে ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে এই পণ্যটি খালাসের অনুমতি দিতে পারতেন। কমিটি গঠনের পর যখন সিদ্ধান্ত আসবে, সেই মতে আমদানিকারক শুল্ক পরিশোধ করবে। কিন্তু কমিশনার মহোদয় কমিটি গঠনের নাম বলে বিষয়টি পরোক্ষভাবে এড়িয়ে গেলেন। আরেকটি বিষয় হলো– কাস্টমসে কিছু কিছু কর্মকর্তাকে উৎকোচ না দিলে বিভিন্ন আইন দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা এটি নতুন কিছু নয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ডুপ্লেক্স বোর্ড হোয়াইট ব্যাক পণ্যটি আমরা ৮৮০ ডলারে শুল্কায়ন করেছি। তারপরেও আমরা ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি কমিটি গঠন করে আন্তর্জাতিক বাজারের আলোকে শুল্কায়নের জন্য যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। এখন আলোচিত চালানটি ৮৮০ ডলারে শুল্কায়ন করতে হবে।