পানির স্তর নেমে অকেজো দশ হাজার নলকূপ

সীতাকুণ্ডে খাবার পানির তীব্র সংকট

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বুধবার , ৩ মে, ২০২৩ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না। এতে ব্যক্তিগত তিন হাজার নলকূপের পাশাপাশি অকেজো হয়ে আছে সরকারিভাবে স্থাপিত সাত হাজার নলকূপ। পানির সংকটে দিশেহারা উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। একদিকে নলকূপে পানি না উঠা অন্যদিকে পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রন থাকায় প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সীতাকুণ্ডের বাসিন্দারা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশের পূর্ব পাশে অপরিকল্পিতভাবে অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প কারখানায় পানি ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভ থেকে। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সাধারণ নলকূপে পানি উঠছে না। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, সৈয়দপুর ও সীতাকুণ্ড পৌরসভা এলাকায় সারা বছরই খাওয়ার পানির তীব্র সংকট থাকে। পানির চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত নলকূপ নেই। ২৫টির মত পাতকুয়া থাকলেও সেখানেও পানি থাকে না। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে সংকট তীব্র রূপ ধারণ করে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকার ৩২টি জেলে পল্ল্লী, ৭টি আদিবাসী এলাকা, বাড়বকুণ্ড ও দারোগারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সারা বছরই পানির সমস্যায় পড়তে হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, হোটেলরোস্তোরাঁগুলোতে খাল ও পুকুরের দূষিত পানি ব্যবহার করছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ব্যক্তিগত নলকূপের পাশাপাশি সরকারিভাবে দশ হাজার নলকূপ রয়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপ অকেজো রয়েছে। এছাড়া চোরেরা নলকূপের উপরের অংশ খুলে নিয়ে যাওয়ার কারণে বেশিরভাগ নলকূপের কোনো চিহ্ন নেই। মাঝে মধ্যে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা নলকূপ সচল করলেও মেরামতের কিছুদিন পর তা পুনরায় অচল হয়ে পড়ে।

বাড়বকুণ্ডের ভায়েরখীল আশ্রয়ণ প্রকল্পের আবদুল কাদের বলেন, প্রকল্পের একমাত্র নলকূপটি অকেজো হওয়ায় বাসিন্দারা প্রায় দেড় মাইল দূরে গিয়ে একটি পুকুর থেকে পানি আনে। কিন্তু সম্প্রতি পুকুরের পানি দূষিত হয়ে যাওয়ায় তা ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুর জেলে পাড়ায় মোহনলাল জলদাস বলেন, তীব্র খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে জেলে পাড়ার অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। এছাড়া পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে গোসলের পানিরও সংকটে পড়তে হচ্ছে। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে আমাদের ময়লাআবর্জনা ভরা পুকুরের পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। যার ফলে এখানকার লোকজন প্রতিনিয়ত পেটের পীড়াসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম চৌধুরী জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আমার এলাকার অধিকাংশ নলকূপ অকেজো হয়ে রয়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটে আমার এলাকার জেলে পল্লীর বাসিন্দারা পাশের খালের পানি পান করছে। যার ফলে প্রতিটি ঘরের লোকজন পানিবাহিত রোগে ভুগছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর উদ্দিন রাশেদ বলেন, উপকূলীয় এলাকার মানুষ পুকুর ও খালের পানি পান করে সারা বছরই পেটের পীড়ায় ভুগতে থাকে। দেখা যায়, হাসপাতালের আসা অধিকাংশ রোগী পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ও আমাশয়সহ নানান পেটের পীড়ায় আক্রান্ত।

সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম জানান, চন্দ্রনাথ পাহাড় ও ইকোপার্ক এলাকায় কৃত্রিম উপায়ে ঝরনার পানিকে বিশুদ্ধকরণের মাধ্যমে খাবার পানি সরবরাহের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এটি হলে পৌরবাসীর পানির সংকট অনেকটাই নিরসন হয়ে যাবে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রাশেদুজ্জামান জানান, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে সরকারি ও ব্যক্তিগত প্রায় ১০ হাজার নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ১৫০ থেকে ১৮০ ফুট পর্যন্ত পাইপ দিয়ে নলকূপ বসানো হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি ওঠে না। অকেজো নলকূপগুলো সহসাই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধ২২ বছর পলাতক, অতঃপর ধরা