১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চল। বিশেষ করে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমের গ্রামগুলোর উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রকৃতির তাণ্ডবলীলা। ঘণ্টায় ২২০–২৪০ কিমি গতিবেগে বাতাস আর প্রায় ২০ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস নিয়ে রাত প্রায় বারোটা নাগাদ উপকূলে আছড়ে পড়ে হারিকেনের শক্তিসম্পন্ন প্রবল এই সুপার সাইক্লোনটি।
দৈনিক আজাদীর কাছে সেদিনের দুঃসহ স্মৃতিচারণ করেন সন্দ্বীপের রহমতপুর ও হরিশপুর ইউনিয়নের দুই বাসিন্দা সামছুদ্দিন বেচু (৬২) প্রকাশ বেচু কন্ট্রাক্টর ও জি এস আবুল বশার (৪৭)। সামছুদ্দিন বেচু বলেন, আমাদের একঘরের ৬ জনই মারা যান ৯১ এর বন্যায়।
ওই রাতের একটা সময় যখন পানি বাড়তে থাকে তখন তিনি তার স্ত্রী আর ছেলে ঘরের টিনের উপরে উঠে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, তার রাইস মিলের প্রায় ১২ শ বস্তা গম বন্যার পানিতে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। তবে ১৬টা গবাদিপশুর কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যদিও সেগুলো আশপাশের গ্রাম থেকে উদ্ধার করতে ৮–১০ দিন লেগেছিল।
৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় আবুল বশার প্রকাশ জিএস বশার তখন ১৫ বছরের যুবক। তিনি বলেন, ১০ নম্বর সিগনালের কথা শুনে সন্ধ্যার দিকে শুধুমাত্র তার মাকে পাশের স্কুলের ভবনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তার ভাই বোন আর পিতা দাদাসহ সবাই বাড়িতেই ছিলেন। রাত ১২ টার দিকে তার পিতা বের হয়ে দেখতে গিয়েছিলেন পাশের সাওতাল খালে পানির অবস্থা। উনি দেখেছিলেন খালে তেমন পানি নেই।
এই খবর তার ঘরে ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছানোর সময়ও টুকু তিনি পাননি। বিশাল এক ঢেউয়ে তিনি উত্তর দিকে ছিটকে পড়েন বলে জানান জিএস বশর। তিনি বলেন, একদিকে তীব্র বাতাস আর অন্যদিকে জোয়ারের কারণে দ্রুতই তাদের বাসায় পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
উপায় না দেখে তিনি তার ভাই বোন বৃদ্ধ দাদাসহ রওনা দেন পাশের এক ব্যাংকের ভবনে আশ্রয় নেয়ার জন্য। সাথে ছিলেন তাদের ভাড়াটিয়াসহ কয়েকটি দোকানের কর্মচারীরা। একপর্যায়ে তীব্র ঢেউ এসে তার দাদা ও এক দোকানের স্টাফকে তাদের থেকে আলাদা করে ফেলে।
দাদাকে পরে জীবিত খুঁজে পেলেও হতভাগা ওই দোকানিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে সুপেয় পানির অভাবে বিভিন্ন দোকানের ভেসে যাওয়া কোমল পানীয় খেয়ে তৃষ্ণা মিটিয়েছিলেন প্রায় এক সপ্তাহে ধরে।