বিবর্ণ এক ঈদ

মোয়াজ্জেম হোসেন | শুক্রবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৩ at ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই উল্লাস। ঈদ সামনে এলে হৃদয়ে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। এ শব্দটা আনন্দের আলাদা মাত্রা বহন করে। কিন্তু ঈদ সবার জন্য সবসময় আনন্দ বয়ে আনে না। কারো কারো জীবনে ঈদ আসে হতাশার আধার নিয়ে। ঈদে দুঃখ কষ্ট, যন্ত্রণা ও বিমর্ষ ভাব বাড়িয়ে দেয়।

তখন সাল ২০০০। ছাত্র জীবন শেষের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের শেষ লিখিত পরীক্ষা হয়ে গেল। বাকি শুধু ভাইবা। এই ফাঁকে বার্ষিক শিক্ষা সফর। এইবারের সবার মতামতের ভিত্তিতে স্থান নির্ধারণ ভারতের দার্জিলিং ও বর্ধমান। অন্যদের চেয়ে আমার উৎসাহ যেন একটু বেশি। প্রথমবার দেশের বাইরে ট্যুর, তাও বন্ধুদের সাথে। পরীক্ষার আগেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। অধ্যাপক ড. সৌরেন বিশ্বাস স্যারের তত্ত্বাবধানে আমরা যাবো। পাসপোর্ট ও ভিসা হয়ে গেছে সবার।

পরীক্ষাও যথাসময়ে শেষ হলো। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে নির্ধারিত দিনে বেরিয়ে পড়া বাকি। আমি গ্রামের ছেলে, পরীক্ষার কারণে দীর্ঘদিন বাড়ি যাওয়া হয় নি। প্রথমবার দেশের বাইরে যাব, হোক তা পাশের দেশ, তাই বাবামার সাথে দেখা করে আসি। বাড়ি পৌঁছালাম ঠিকই, কিন্তু বাড়ি থেকে ঠিকমতো আসতে পারলাম না। মিথ্যা মামলায় ফেঁসে গেলাম। গ্রেফতার হয়ে সোজা হাজতবাস। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে দীর্ঘ সময়ের জন্য আটকে গেলাম। বন্ধুরা আমাকে ফেলে শিক্ষা সফরে চলে গেল এবং যথাসময়ে আনন্দময় সফর শেষ করে আসল। আসলে আমার জন্য তাদের দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। এরপর রমজান মাস চলে আসল। এই রমজানে কারাগারে কতজন আসলো গেলো, আমার কিন্তু মুক্তি মিলে না। বন্দী জীবনে নামাজ, কোরআন তেলোওয়াত, বই পড়ে ও বন্ধুদের আড্ডায় দিন কেটে যায়। ঈদ এসে গেলো। বাড়ি থেকে, বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে ঈদের পাঞ্জাবি, পাজামা, শার্ট ও সেন্ডেল বেশ কয়েকটি পেলাম। তবু বন্দী জীবনের ঈদ খুবই কষ্টের, শুধু আমার একার না, বাবামা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার জন্য কষ্টের। অনেকগুলো পানসে, বর্ণহীন, নিরানন্দ, কষ্টদায়ক দিন পার করে আরেকটি ঈদের অল্প কিছুদিন আগে মুক্তির সাধ পেয়েছি। পরের ঈদ অর্থাৎ ২০০১ ঈদ ছিল অনেক বেশি আনন্দের, অনেক বেশি বর্ণিল, সম্পূর্ণ মুক্ত ও স্বাধীন মানুষের ঈদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদ কার্ডের কথা
পরবর্তী নিবন্ধশৈশব-স্মৃতিতে ঈদ