সময়োপযোগী সঠিক চিকিৎসার অভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি

বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল হিমোফিলিয়া রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদ্‌যাপন করা হয়। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি আজ নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্‌যাপিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামেও বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হিমোফিলিয়া একটি অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণজনিত রোগ। এটি বংশগত রক্ত রোগ, যা জিনের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে পরিবাহিত হয়।

বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৩ কোটি শিশু জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে ২০ হাজার শিশু হিমোফিলিয়া নিয়ে জন্মায়। হিসেবে প্রতি ১০ হাজারে একজন এই রোগে আক্রান্ত, যাদের ৭৫ শতাংশই সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। আর এ রোগে আক্রান্তদের সময়োপযোগী সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব না হলে শারীরিক প্রতিবন্ধিতার পরিণতি ঘটতে পারে। অর্থাৎ সময়োপযোগী সঠিক চিকিৎসা না পেলে এ রোগে আক্রান্তদের শারীরিক প্রতিবন্ধীতার ঝুঁকি রয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম রাব্বানী।

চিকিৎসকদের মতেমানুষের শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত হয়। শরীরের নিয়মেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই রক্তপাত থেমেও যায়। রক্ত জমাট বাঁধতে কাজ করে প্ল্যাটিলেটসহ নানা রকম উপাদান। রক্ত জমাট বাঁধায় সমস্যার সৃষ্টি হলে, শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। মেয়েরা সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয় না, তবে রোগের বাহক হয়। এ রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা থাকলে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে অনাগত শিশুকে মুক্ত রাখা সম্ভব।

হিমোফিলিয়া কীভাবে হয় : হিমোফিলিয়া একটি বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ। এই রোগে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাই শরীরে কোথাও কেটে গেলে আর রক্তপাত বন্ধ হয় না। মানুষের শরীরের এক্স ক্রোমোজোমে এফ৮ ও এফ৯ নামক জিন থাকে, যা ফ্যাক্টর৮ ও ফ্যাক্টর৯ নামক প্রোটিন তৈরির কাজে জড়িত। শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এই ফ্যাক্টরগুলো কাজ করে। এই প্রোটিন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে থাকলে রক্ত জমাট বাঁধায় সমস্যা দেখা দেয়। কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তখন এই রোগকে বলা হয় হিমোফিলিয়া। এই রোগ সাধারণত দুই ধরনেরহিমোফিলিয়াএ ও হিমোফিলিয়াবি। এ ছাড়া হিমোফিলিয়াসি নামেও একধরনের রোগ আছে, যা খুবই বিরল।

হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা : বাংলাদেশে কতসংখ্যক হিমোফিলিয়া রোগী আছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশ্ব জরিপে দেখা যায়, বিশ্বে প্রতি ১০ হাজারে একজন হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার হওয়ার কথা। তবে দেশীয় এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আনুমানিক ৩ থেকে ৪ হাজার রোগী নিয়মিতভাবে চিকিৎসাসেবার আওতায় আছে। চট্টগ্রামেও এ রোগে আক্রান্তের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা কারো কাছে নেই। আসলে বিশ্বের কোথাও এই রোগের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। শুধু যারা চিকিৎসার আওতায় আসে, তাদের হিসাব থেকেই এই জরিপগুলো চালানো হয়।

চিকিৎসা : অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ থেকে সাবধান থাকাই এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। তাই আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হয়।

হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য জিন থেরাপির বিষয়টি গবেষণায় রয়েছে এবং উন্নত দেশগুলোতে জিন থেরাপি সফলভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু স্বল্প উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো জিন থেরাপি চালু হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্গম লক্ষ্মীছড়িতে দেশি মুরগির বিপ্লব
পরবর্তী নিবন্ধ‘নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে যা করণীয় তাই করবো’