সাধারণত এপ্রিল মাসে আবহাওয়ায় যে উত্তাপ থাকে তা বৃষ্টি হলে কমে যায়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত টানা ৯ দিন নগরে কোনো বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেনি আবহাওয়া অফিস। যা ‘ট্রেস’ পর্যায়েও ছিল না। শুধু চট্টগ্রাম না, পুরো দেশেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল অনেকটা শূন্য। বিপরীতে এ সময়ে প্রতিদিন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রেকর্ড হয়েছে নগরে। এর মধ্যে দুদিনের তাপমাত্রা ছিল মৃদু তাপদাহের ঘরে। ফলে বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আছেন নগরবাসী। এ অবস্থায় গরমে কাহিল লোকজনের প্রত্যাশা ছিল তাপমাত্রা কমবে, লাগব হবে গরমের যন্ত্রণা। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপমাত্রা কমা নিয়ে কোনো সুখবর নেই। বরং আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা একই থাকার কথা বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে গতকাল ভোর থেকে রাত পৌনে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা–যাওয়া অভিযোগ ছিল স্থানীয়দের। তারা বলছেন, এমনিতেই গরমে হাঁসফাঁস করছেন, বিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে সে কষ্ট বেড়ে যায় বহুগুণ।
টানা ১০ দিন অতিরিক্ত তাপমাত্রা : চলতি মাসের প্রথম পাঁচ দিন অর্থাৎ ১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত নগরের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। কিন্তু ৬ এপ্রিল থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রেকর্ড হয়। যেখানে দুই দিন রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা ছিল মৃদু তাপদাহের ঘরে। এ দুদিনের মধ্যে ১৪ এপ্রিল রেকর্ড করা হয় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ৯ এপ্রিল রেকর্ড করা ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু তাপদাহ বলা হয়। এছাড়া এপ্রিল মাসের চট্টগ্রামের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গতকাল নগরে রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাবাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর আগে ৬ এপ্রিল থেকে বৃদ্ধি পাওয়া তাপমাত্রার রেকর্ডে দেখা যায়, ৬ এপ্রিল ৩২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১২ এপ্রিল ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ১৩ এপ্রিল ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
এদিকে ১ থেকে ৬ এপ্রিলের রেকর্ডকৃত তাপমাত্রার মধ্যে ১ এপ্রিল ছিল ২৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম। এছাড়া ২ এপ্রিল ৩০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ৩ এপ্রিল ৩১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ৫ এপ্রিল ৩১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
এদিকে নগরের বাইরে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সন্দ্বীপ উপজেলায় ৩৭ দশমিক ৭৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় গতকাল। নগরের বাইরে উপজেলা দুটির তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা যাবে।
কেন এই তাপমাত্রা : রাজধানীর আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শরিফুল নেওয়াজ কবির সাংবাদিকদের বলেন, এই সময়ে যে উত্তাপটা থাকে, বৃষ্টি হলে সেটা কমে যায়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ৪ তারিখের পর থেকে পুরো দেশে বৃষ্টিপাত অনেক কম, শূন্য বললেই চলে। হিট ওয়েভের পরিস্থিতি এ কারণে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, এখন যদি ওয়াইড স্পেসে বা দেশজুড়ে মুষলধারে বৃষ্টি হতো তাহলে হয়ত তাপমাত্রাটা কমে যেত।
হচ্ছে না বৃষ্টি : ৬ এপ্রিল পতেঙ্গা আবহাওয়া বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দেখায় ‘ট্রেস’। এরপর ৭ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যন্ত ছিল শূন্য। ট্রেস হচ্ছে পরিমাণে এত কম বৃষ্টি হওয়া, যা পরিমাপযোগ্য না।
আরো কয়েক দিন তাপমাত্রা একই থাকবে : পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা আজাদীকে বলেন, আরো কয়েকদিন তাপমাত্রা একই থাকতে পারে। এ সময়ে বৃষ্টিপাতেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, আজ রোববারের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগারগাঁও আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর ফলে আজ রোববার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।