সর্বজনীন পহেলা বৈশাখ

রিয়াজুল হক | বুধবার , ১২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

কিছু দিন ধরে গরমে তোমাদের জীবন নিশ্চয়ই অতিষ্ট হয়ে উঠেছে? তোমরা নিশ্চয়ই জানো এখন বাংলা সনের কোন মাস। ঠিকই ধরেছো, চৈত্র মাস। চৈত্র মাসে বাংলাদেশের আবহাওয়া এমনই রুক্ষ থাকে। বৈশাখের ১ তারিখ শুরু হবে নতুন বছর, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। ওই দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ মানেই মঙ্গল শোভাযাত্রা, জায়গায় জায়গায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা, রঙবেরঙের পোশাক পরে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ানো, আর ঘরে ঘরে পিঠা, পায়েশ ও নাড়ু খাওয়া। হরেক রকমের আনাজ সব্জি দিয়ে তরকারিও রান্না করে অনেকেই। ফুল দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘর সাজানো হয়।

বর্তমানে পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন লোকজ উৎসবে পরিণত হয়েছে। পুরাতন বছরের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন বছরে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে এই উৎসব পালিত হয়। তোমরা নিশ্চয়ই কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে পরিচিত। এই ঝড় কিন্তু সাধারণত বৈশাখ মাসেই হয়ে থাকে। তখন ঝড়ের সাথে বৃষ্টিপাত হয়ে পৃথিবী কিছুটা শীতল হয়।

তোমরা কি জানো কে এই বঙ্গাব্দের প্রচলন করেছিলেন? মোগল সম্রাট আকবর ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের ১০/১১ তারিখ এই বাংলা সনের প্রবর্তন করেছিলেন কিন্তু তিনি এই সন কার্যকর করেন তাঁর সিংহাসনে আরোহনের সময় (৫ নভেম্বর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ) থেকেই। তখন কিন্তু এর পরিচিতি ছিল ‘ফসলি সন’ হিসেবে যাকে আমরা এখন বঙ্গাব্দ হিসেবে চিনি।

এই বাংলা সন প্রচলনের কারণ কী তা তোমরা জানো? এর কারণ হচ্ছে তখন প্রচলিত হিজরি সন চন্দ্র ভিত্তিক সন হওয়ায় প্রতি বছর একই মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না। তাই সম্রাটের জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লা শিরাজীর সহযোগিতায় বাংলা সন চালু করা হয়।

তোমরা হয়তো ভাবতে পারো ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে চালু হলে আজকে ১৪৩০ হয় কীভাবে? তোমরা জেনে রাখো বাংলা সন কিন্তু শূন্য বছর ধরে শুরু হয়নি। সম্রাট আকবর যেই বছর বাংলা সন প্রবর্তন করেন সেই বছর হিজরি সন ছিল ৯২৩। বাংলা সনের বয়স ৯২৩ ধরেই যাত্রা শুরু হয়। তোমরা কি জানো বাংলা মাসগুলোর নাম কোথা থেকে এসেছে? এসেছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নাম থেকে।

আচ্ছা, তোমাদের মনে কি এমন প্রশ্ন আসে যে বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন কোন দেশে পহেলা বৈশাখ পালিত হয়? বাংলাদেশ ছাড়াও মায়ানমার, থাইল্যান্ড, নেপাল, লাওস, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ায় ভিন্ন নামে নতুন বছরের এই উৎসব পালিত হয়।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও ভিন্ন ভিন্ন নামে বৈশাখী উৎসব পালিত হয়। যেমনপশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায় পহেলা বৈশাখ, পাঞ্জাবেবৈশাখী, আসামে বিহু, কেরালায় ভিষু, উড়িষ্যায় পান সংক্রান্তি, তামিল নাড়ুতে পুথান্দু উৎসব পালিত হয়।পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশের চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিসু এবং মারমারা সাংগ্রাই উৎসব পালন করে। বাংলাদেশের তিন প্রধান পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ‘বৈসাবি’ হিসেবে পহেলা বৈশাখের এ উৎসব পালন করে থাকে।

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের আগে কিন্তু এখনকার মতো ঘটা করে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখের উৎসব পালিত হতো না। সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটই সর্বপ্রথম ঢাকার রমনার বটমূলে বর্ষবরণ এবং মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই উদ্যোগই এখন সর্বজনীন রূপ লাভ করেছে এবং দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধোপাছড়ি ডেকে যায় একাকী নিরালায়
পরবর্তী নিবন্ধমানুষের কল্যাণে কাজ করাই আমার ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য