আসন্ন ঈদুল ফিতরে এবার অনেক বেশি মানুষ গ্রামের বাড়ি যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ঈদে মানুষ গ্রামে কমই ফিরেছিল। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বেন। বলা জরুরি যে, ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জের বিষয়। নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। ঈদযাত্রায় ঝুঁকি ও বিড়ম্বনার কিছু কারণ রয়েছে এবং প্রতি বছরই উৎসব উদযাপনে বাড়ি ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায় বিপুলসংখ্যক মানুষ, আহত হয় অনেকে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তি–বিড়ম্বনার কারণ।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের জরিপে বলা হয়েছে, মার্চ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫৬৪ জন। অন্যদিকে যাত্রীকল্যাণ সমিতির জরিপে বলা হয়েছে ৫৩৮ জন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত দুই সংগঠনের ভাষ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির চেয়ে মার্চে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী ১৯৪ জন (৩৪.৩৯%), বাসযাত্রী ৫৩ জন (৯.৩৯%), ট্রাক–কাভার্ড ভ্যান–পিকআপ–ট্রাক্টর–ট্রলি–লরি আরোহী ৪৯ জন (৮.৬৮%), মাইক্রোবাস–প্রাইভেট কার–অ্যাম্বুলেন্সযাত্রী ২২ জন (৩.৯০%), থ্রি হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক–সিএনজি–অটোরিকশা–অটোভ্যান–লেগুনা) ১০৪ জন (১৮.৪৩%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নছিমন–ভটভটি–আলমসাধু–পাখিভ্যান–মাহিন্দ্রা–টমটম) ২৪ জন (৪.২৫%) এবং বাইসাইকেল–প্যাডেল রিকশা–রিকশাভ্যান আরোহী ১১ জন (১.৯৫%) নিহত হয়েছে। এই হিসেব ধারাবাহিকভাবে এপ্রিলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ইঙ্গিত বহন করছে। এপ্রিলে ঈদ যাত্রা হওয়ার কারণে অনেকেই উদ্বিগ্ন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালনা এবং ত্রুটিপূর্ণ সড়ক। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের জন্য চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে থাকেন। যার ফলে দুর্ঘটনার ঘটনা বেড়ে যায়। এছাড়া ঈদের সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটিও দুর্ঘটনার একটি কারণ। তাই চালকদের এ ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অসুস্থ বা ক্লান্ত–পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে একই কথা বলা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, চালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো, বেপরোয়া গতি ও বিপজ্জনক ওভারটেকিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে নামানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব মিলিয়ে ঈদযাত্রা একটা কঠিন যাত্রায় পরিণত হওয়ার আশংকা তৈরি হয় প্রতি বছর। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লাখ লাখ মানুষের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক, নৌ ও রেলপথে যেহেতু অধিকাংশ মানুষ ভ্রমণ করে, সেক্ষেত্রে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ঈদযাত্রায় অনেক সময় নানা দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চডুবির ঘটনা প্রায়ই আমরা দেখতে পাই। সুতরাং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করার ব্যাপারটিও গুরুত্বের সঙ্গে তদারকির প্রয়োজন। বিশেষ করে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না তোলা এবং ট্রেনের ছাদে যাতে কোনো যাত্রী ভ্রমণ করতে না পারে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মহাসড়কগুলোর যানজট নিয়ন্ত্রণে হাইওয়ে পুলিশের সংখ্যা এবং তৎপরতা বাড়ানোকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
এবার ঈদযাত্রার ভোগান্তি নিরসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে। কীভাবে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ কমানো যায় সেই পথ খুঁজতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতারাতি যেমন পরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়, তেমনি রস্তাঘাটের উন্নতি করাও কঠিন। কিন্তু পরিকল্পনা করে কিছু স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিলে সুফল মিলতে পারে। সড়কে আনফিট গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে সেটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঈদযাত্রায় প্রায়ই সড়কে গাড়ি বিকল হতে দেখা যায়, যা যানজট তৈরির বড় কারণ। এ ক্ষেত্রে সড়কে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই।