‘পরকীয়ার জেরে’ বাবুল আক্তার ‘পরিকল্পিতভাবে অন্য আসামীদের টাকা দিয়ে’ তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে ‘খুন করিয়েছে’ বলে আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে দাবি করেছেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন।
আজ রবিবার (৯ এপ্রিল) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে প্রথম সাক্ষী হিসেবে এমন অভিযোগ করেন মিতুর বাবা।
বেলা ১২টায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে মাঝে আধ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে চলে বিকাল সোয়া ৩টা পর্যন্ত। তবে সাক্ষ্য অসমাপ্ত রেখেই দিনের কার্যক্রম শেষ হয়। আদালত আগামী ২ মে সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছে।
এদিন চট্টগ্রামের আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পর তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাত আসামীর বিচার শুরু হয় এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর মধ্য দিয়ে।
মোশাররফ দীর্ঘ সাক্ষ্যে মিতু হত্যার ঘটনা, জানাজা ও দাফন, বাবুল আক্তারের বাদী হয়ে মামলা করা, পরে তাদের ঢাকার বাসায় বাবুলের অবস্থান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ডিবি অফিসে নেওয়া, কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় বাবুলের সঙ্গে একজন নারী এনজিও কর্মীর সম্পর্ক, এর জেরে মিতু-বাবুলের সম্পর্কের অবনতি, মিতুর একাধিকবার ঘর ছাড়ার চেষ্টা এবং আত্মহত্যার চেষ্টার বিষয়ে বিস্তারিত বলেন।
আদালত থেকে বেরিয়ে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ সাংবাদিকদের বলেন, “বাবুল আক্তার পরকীয়ার কারণে ষড়যন্ত্র করে মিতুকে হত্যা করেছে। আসামীদের সাথে গোপনে বৈঠক করেছে, তাদের টাকা দিয়েছে। তারপর হত্যা বাস্তবায়ন করেছে। এই বিষয়টি আজ সাক্ষ্যে বলেছি। এরপর আসবে আমার মামলার প্রশ্ন। সেই বিষয়ে সাক্ষ্য এখনও হয়নি।”
সাক্ষ্য শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি আবদুর রশিদ বলেন, “এটা পরিকল্পিত একটা হত্যাকাণ্ড। বাবুল আক্তার যে পরিকল্পনা করেছেন, অন্যান্য আসামীদের যে প্রস্তুত করেছেন পরিকল্পিত একটা হত্যাকাণ্ডের জন্য, সেটাই আজকের সাক্ষ্যে এসেছে। আজকের সাক্ষ্যে প্রতীয়মান, মিতুকে হত্যায় বাবুল আক্তার যে পরিকল্পনা করেছিল সেটাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।”
আসামিপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, “আজ মিতুর বাবা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি একেক সময় একেক বক্তব্য রাখেন। শুরুতে বলেছিলেন, তার মেয়ের সাথে তার জামাইয়ের খুবই সুসম্পর্ক। পরবর্তীতে আরেক কথা বলে তিনি একটা এজাহার করেছেন যা আদালত গ্রহণ করেনি। আজকে তৃতীয় ধরনের কথাবার্তা বলেছেন। একেক সময় উনার একেক কথা প্রমাণ করে এটা পরিকল্পিত বক্তব্য।”
২০১৬ সালে মিতু খুন হওয়ার পর তার স্বামী সেই সময়ের পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা করেছিলেন। নানা নাটকীয়তা শেষে পিবিআই-এর তদন্তে এখন তিনিই এ মামলার আসামী।
মামলার বাকি আসামীরা হলেন মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, এহতেশামুল হক ভোলা, শাহজাহান মিয়া, কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা ও খায়রুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এসপি বাবুল তার কিছুদিন আগেই চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে ছিলেন। বদলি হওয়ার পর তিনি ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার পরপরই চট্টগ্রামে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।